1. admin@dwiptv.com : dwiptv.com :
  2. dwiptvnews2121@gmail.com : sub editor : sub editor
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৫৫ অপরাহ্ন

সিরাজদিখানে সনাতনী পদ্ধতিতে হাত-পা ভাঙ্গা জোড়া দিচ্ছে হাতুড়ে কবিরাজ

লিটন মাহমুদ, মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি
  • আপডেট: সোমবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২২
সিরাজদিখানে সনাতনী পদ্ধতিতে হাত-পা ভাঙ্গা জোড়া দিচ্ছে হাতুড়ে কবিরাজ
সিরাজদিখানে সনাতনী পদ্ধতিতে হাত-পা ভাঙ্গা জোড়া দিচ্ছে হাতুড়ে কবিরাজ

মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে আধুনিক যুগেও চলছে সনাতনী পদ্ধতিতে হাত-পা ভাঙ্গা জোড়া দেওয়ার চিকিৎসা। উপজেলার রশুনিয়া ইউনিয়নের চোরমদন ও দানিয়াপাড়া গ্রামে ৫-৬ জন হাতুড়ে কবিরাজ দোকান খোলে দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিতভাবে এ চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন। প্রথম কয়েক দিন ভাঙা হাত-পায়ে গাছের ছাল-বাকল-লতাপাতা লাগিয়ে রাখা হয়। তারপর টানা ৬দিন হাত ও পায়ের দুই পাশে ইট দিয়ে চেপে রাখা হয়। পরে প্রতিদিন চলতে থাকে ঝাড়ফুঁক-মালিশ। এভাবেই চলে চিকিৎসা।

 

গতকাল রবিবার বেলা ১১ টার দিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, সিরাজদিখান-নিমতলা সড়কের চোরমদন শ্মশান ঘাট থেকে ১০০ ফুট সামনে দোকান খোলে দীর্ঘদিন ধরে রাস্তার দুই পাশে অনুমতিহীন ৫-৬টি হাড়ভাঙ্গা চিকিৎসালয় গড়ে উঠেছে। তারা বাশের চোটি ও গাছের ছাল-বাকল-লতাপাতা, ঝাড়ফুঁক-মালিশ দিয়ে চিকিৎসা দিচ্ছে। এতে দরিদ্র-অসহায় মানুষ স্বল্প খরচে চিকিৎসার জন্য এসব কথিত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। এ ধরনের চিকিৎসা রোগীর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু দেখার কেউ নেই। জানা য়ায়, দীর্ঘ অনেক বছর শ্রীধাম চন্দ পাল সুনামের সহিত হাত-পা ভাঙ্গা জোড়া দেওয়ার চিকিৎসা করে গেছেন। তার মৃত্যুর পর থেকেই ৫-৬ জন অনভিজ্ঞ কবিরাজ তার স্থান দখল করার জন্য দোকান খুলে বসে। এতে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাত-পা ভাঙ্গার জোড়া দেওয়ার জন্য চিকিৎসা নিতে আসেন। কিন্তু এ উপজেলার মানুষ চিকিৎসা নিতে যায় না। আরো জানা যায়,দীর্ঘ দিন ধরে নিয়মিতভাবে হাত-পা ভাঙ্গা জোড়া দেওয়ার চিকিৎসা দিয়ে থাকেন ৫-৬ জন অনভিজ্ঞ কবিরাজ। প্রথম কয়েক দিন ভাঙা হাত-পায়ে গাছের ছাল-বাকল-লতাপাতা লাগিয়ে রাখা হয়। তারপর টানা ৬দিন হাত ও পায়ের দুই পাশে ইট দিয়ে চেপে রাখা হয়। পরে প্রতিদিন চলতে থাকে ঝাড়ফুঁক-মালিশ। এভাবেই চলে চিকিৎসা।

 

কেরানীগঞ্জ থেকে চিকিৎসা নিতে আসা ইমন হোসেন জানান, আমার পায়ের হাড় ভেঙে গেছে বেশ কিছুদিন আগে। লোকমুখে শুনে এইখানে চিকিৎসা নিতে এসেছি। কবিরাজ বাশের চোটি দিয়ে বেধে দিয়েছে আর ব্যাথা-বেদনা কমানোর জন্য রোলাক নামের ট্যাবলেট দিয়েছে। প্রায়ই এক মাস হয়ে যাচ্ছে কিন্তু এখন সুস্থ হয়ে উঠতে পারিনি। আরেকজন আওলাদ হোসেন বলেন, আমি সোহেল কবিরাজের থেকে আমার হাত ভাঙ্গার চিকিৎসা করেছি। সে দীর্ঘদিন আমার থেকে তেল মালিশ দিয়ে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা নিয়ে গেছে। কিন্তু আমার এখন পর্যন্ত হাত ভালো হয়নি। এরকম হাতুড়ে কবিরাজদের পিটিয়ে এলাকা থেকে উঠিয়ে দেওয়া দরকার। তা না হলে মানুষের আরো অনেক ক্ষতি হবে আমার মতো। আমি এখন ডাক্তারের কাছ থেকে চিকিৎসা নিচ্ছি, মোটামুটি আগের থেকে একটু ভালো হয়েছে। তবে ভবিষ্যতে আর কখনো আমিও যাবো না এরকম হাতুড়ে কবিরাজের কাছে। বিখ্যাত হাড় ভাঙ্গা চিকিৎসালয়ের হাতুড়ে কবিরাজ রতন জানান, ১৭-১৮ বছর ধরে এই পেশায় জড়িত আছি। অনেকে আমার কাছ থেকে চিকিৎসা নিয়ে ভালো হয়েছে। হাড়া ভাঙ্গা চিকিৎসালয়ের বৈধতা আছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, শ্রীধাম চন্দ পালের কাছ থেকে চিকিৎসা দেয়া শিখেছি, ইউনিয়ন পরিষদের ট্রেড লাইসেন্স আছে,তবে সরকারি কোনো অনুমোদন নেই।

 

তিনি আরো জানান, ধানিয়াপাড়া গ্রামের মাধপ চন্দ্র পাল, চোর মদন গ্রামের ইসমাইল সহ অনেকে বছরের পর বছর ধরে এই পেশায় জড়িত আছে। হাড় ভাঙ্গা হাতুড়ে কবিরাজ হাওলাদার সোসেল বলেন,আমার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও জানি কী কী করতে হয়। আমি গর্ভবতী নারী এবং রোগীর ডায়াবেটিস থাকলে কাজ করি না। তাই কাজের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যাও হয় না। প্রথম কয়েক দিন ভাঙা হাত-পায়ে গাছের ছাল-বাকল-লতাপাতা লাগিয়ে রাখা হয় এবং ব্যথানাশক ঔষুধ লিখে দেওয়া হয় ব্যথা হলে খেতে রোগীকে। পরে প্রতিদিন চলতে থাকে ঝাড়ফুঁক-মালিশ। অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ ও সার্জন,ডা. মোহাম্মদ জহুরুল ইসলাম বলেন,অর্থোপেডিএক্স বিশেষজ্ঞ হাড় ভাঙ্গার চিকিৎসা করে থাকে। এটা তাদের কাজ,কবিরাজের কাজ না। যথাস্থানে ভাঙ্গা হাড় না বসিয়ে প্লাস্টার করলে হাত বা পা পরবর্তীতে বাঁকা হয়ে যেতে পাড়ে। ছাল-বাকল-লতাপাতা থেকে ইনফেকশন হয়ে পচন ধরতে পাড়ে। তাই অর্থোপেডিএক্স বিশেষজ্ঞের কাছে গিয়ে হাড় ভাঙ্গার চিকিৎসা করতে হবে। রশুনিয়া ইউপির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবু সাইদ বলেন,এ বিষয়ে আমি জানতাম না, যেহেতু আমি এবার নতুন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে এসেছি, তবে আমি খোঁজ খবর নিয়ে দেখবো, এই বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আঞ্জুমান আরা জানান,এদের সরকারি ভাবে কোনো অনুমোদন নেই সুতরাং এই কবিরাজি পদ্ধতি চিকিৎসা তারা দিতে পারেন না। এর আগে একবার মোবাইল কোটের মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। এখন আবার তারা পুনরায় হাড় ভাঙ্গা চিকিৎসা দিচ্ছে, বিষয়টি নিয়ে আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে কথা বলে প্রশাসনিক ভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। মুন্সিগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. মঞ্জুরুল আলম জানান, বিষয়টি আমি আগে জানতাম না আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম, আমি খোঁজখবর নিয়ে দেখব যদি সরকারি অনুমতিহীন এর রকম ভাড় ভাঙ্গা চিকিৎসালয় থেকে হাড় ভাঙার চিকিৎসা করে থাকেন,তা হলে তাদের ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করবো।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন

আমাদের এন্ড্রয়েড এপস আপনার মোবাইলে ইন্সটল করুন।

Developer By Zorex Zira