যশোরে খুন- জখম,শ্বাসরোধ ও ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন জেলার সাধারণ মানুষ। চলতি বছরের উল্লেখযোগ্য -সাত মাসে যশোরে দুর্বৃত্তদের ভয়াবহ নৃশংসতায় হত্যার শিকার হয়েছেন সর্বশেষ যুবদল নেতা বদিউজ্জামান ধনিসহ ১২ জন। যদিও প্রায় প্রতিটি হত্যার ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত এবং অধিকাংশ আসামিকে আটক করেছে পুলিশ। তারপরও থেমে নেই প্রতিহিংসামূলক হত্যাকান্ড।
যুবদল নেতা বদিউজ্জামান ধনি হত্যা গত ১ জুলাই ২০২২ খ্রি: দুপুরে যশোর শহরের শংকরপুর আকবরের মোড়স্থ নিজ বাড়ির সামনে সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হন জেলা যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি বদিউজ্জামান ধনি। সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে নৃশংসভাবে তাকে কুপিয়ে হত্যা করে। অসুস্থ বলা সত্বেও সন্ত্রাসীরা উপর্যুপরি ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যার পর দূর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। অবশ্য এই ঘটনায় ইতোমধ্যে ৪ জন আটক করেছে পুলিশ।
শার্শায় ইউপি মেম্বার বাবলু হত্যা গত ২১ জুন রাত পৌনে ১০ টার দিকে শার্শা উপজেলার বালুন্ডা বাজারে খুন হন বাগআঁচড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার আশানুর জামান বাবলু। পূর্ব শত্রুতার জের ধরে স্থানীয় একটি চক্র তাকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করে।তথ্যনুসন্ধানে জানা গেছে, হত্যাকাণ্ডটি ছিলো পূর্ব পরিকল্পিত। প্রতিপক্ষরা ধারালো অস্ত্র উঁচিয়ে গিয়ে তাকে কুপিয়ে হত্যা করে।তাৎক্ষনিক সময় তারা বাজারে বোমার বিস্ফোরণও ঘটায়। এ ঘটনায় তখন বাজারের লোকজনের মধ্যে চরম আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছিলো। বাজারের একটি স্থানের ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় হত্যার উদ্দেশ্যে দা ও বোমা নিয়ে দৌড়ে যাওয়ার সেই দৃশ্য ধরা পড়ে। বাবলু হত্যার ঘটনায় ইতোমধ্যে কয়েকজনকে আটক করেছে জেলা গোয়েন্দা ডিবি পুলিশ।
তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) লাভলী হত্যা চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি ২০২২খ্রি: যশোরে নৃশংসভাবে খুন হন তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) লাভলী। সদর উপজেলার নারাঙ্গালী গ্রামে ইজিবাইকের ভেতর তাকে ছুরিকাঘাতে ও গলা কেটে হত্যা করা হয়। হিজড়া সম্প্রদায়ের নেতৃত্ব দখল ও আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে তাকে এভাবে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। হত্যা মিশনে অংশ নেয়া দুই যুবক ছাড়াও পরিকল্পনার সাথে জড়িত দুই হিজড়াকে পরে আটক করে ডিবি পুলিশ।
ইয়াসিন হত্যা গত ১৬ ফেব্রুয়ারি রাতে যশোর শহরের শংকরপুর চোপদারপাড়ার ব্রাদার্স ক্লাবের ভেতর খুন হন আলোচিত ইয়াসিন আরাফাত ওরফে হুজুর ইয়াসিন। কয়েক বছর ধরে চলে আসা দ্বন্দ্বের জের ধরে একই এলাকার স্বর্ণকার রানা গং তাকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করে। এই হত্যাকান্ডটি ছিলো পূর্ব পরিকল্পিত। যা ডিবি পুলিশের তদন্তে উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের এসআই মফিজুল ইসলাম হত্যা মিশনে অংশ নেয়া স্বর্ণকার রানা ও রুবেলসহ সকলকে আটকও করতে সক্ষম হয়েছেন। আদালতে তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন।
চৌগাছায় ইউপি মেম্বার ঠান্ডু হত্যা গত ২১ ফেব্রুয়ারি রাতে চৌগাছা উপজেলার পাতিবিলা বাজারে স্থানীয় ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি মেম্বার ঠান্ডু বিশ্বাস খুন হন। তাকে ছুরিকাঘাতে নৃশংসভাবে হত্যা করে প্রতিপক্ষ লোকজন। এ ঘটনায় জড়িত কয়েকজন আটকও হয়েছেন।
শার্শায় সুমাইয়া হত্যা গত ২৪ মার্চ রাতে শার্শা উপজেলার চাঁপাতলা ঝিনুকদাহ মাঠে প্রেমিকের হাতে খুন হন সুমাইয়া নামে এক নারী। মাদকাসক্ত হয়ে একাধিক ছেলের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলায় ক্ষুব্ধ হয়ে ডেকে নিয়ে তাকে ছুরিকাঘাতে এবং হাতের রগ কেটে ও জবাই করেন প্রেমিক বাপ্পি।
পুরাতন কসবায় রুম্মান হত্যা গত ২৫ মার্চ রাতে যশোর শহরের পুরাতন কসবা কাঁঠালতলা এলাকায় যুবলীগ কর্মী হোসাইন মোহাম্মদ রুম্মান নামে এক যুবককে অনুরূপ নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। বিরামপুরের এক নারীর পক্ষ হয়ে স্বামীর কাছ থেকে আদায় করা টাকার হিস্যার ভাগাভাগি দ্বন্দ্বে কয়েকজন সন্ত্রাসী ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে তাকে হত্যা করে।
চৌগাছায় দুই মার্ডার গত ৭ এপ্রিল রাতে চৌগাছা উপজেলার টেঙ্গুরপুরে আইয়ুব ও ইউনুস নামে দুই সহোদরকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। পূর্ব শত্রুতার জের ধরে বাকবিতণ্ডের একপর্যায়ে প্রতিপক্ষের লোকজন কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে তাদের হত্যা করে।
বাঘারপাড়ার কৃষাণ নকিম হত্যা গত ২৯ মে রাতে বাঘারপাড়া উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামে নৃশংসভাবে খুন হন কৃষাণ নকিম উদ্দিন। চির যৌবনের আশায় কবিরাজের পরামর্শে তাকে হত্যার পর পুরুষাঙ্গ ও চোখ উপড়ে নিয়ে যান লিটন নামে আরেক কৃষাণ।
সদরের বারান্দীপাড়ায় অপু হত্যা গত ৭ জুন সকালে যশোর শহরের পশ্চিম বারান্দীপাড়া খালধার রোডে খুন হন সাত মামলার আসামি অনুরাগ ইসলাম অপু। পূর্ব শত্রুতার জের ধরে প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসীরা তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও গলা কেটে নৃশংসভাবে হত্যা করে।
শংকরপুরে আফজাল হত্যা গত ২৯ মে রাতে শহরের নাজির শংকরপুর চাতালের মোড় এলাকায় প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হন প্রায় এক ডজন মামলার আসামি আফজাল হোসেন। সন্ত্রাসীরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ধারালো অস্ত্র দিয়ে নৃশংসভাবে কুপিয়ে তাকে হত্যা করে। তবে এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত কয়েকজনকে আটক করলেও মূল কিলার হিসেবে আলোচিত এজাহারভুক্ত আসামি ট্যারা সুজনকে এখনো আটক করতে পারেনি পুলিশ।
সমাজের সচেতন মহল বলেছেন,অধিকাংশ খুনের ঘটনা মাদক,জমিজমা, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করে দুনিয়া থেকে বিদায় দেওয়া।ঘাতকরা জানেন না যে,ডিজিটাল অত্যাধুনিক যুগে এখন দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখন অনেক তৎপর। চলতি অর্থ বছরে যশোর জেলায় যেগুলো অপ্রীতিকর নৃশংস ঘটনার সাথে জড়িত প্রায়গুলো আটক করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছেন।
Leave a Reply