তিন বন্দি কিশোর হত্যার বছর পেরুতে না ফেরুতেই উতপ্ত হয়ে উঠেছে যশোর যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র (বালক)। বন্দিরা বিক্ষোভ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটিয়েছে। আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে কেন্দ্রে। এ ঘটনায় এক পুলিশ সদস্য এবং কয়েকজন বন্দি আহত হয়েছে। পালিয়ে গেছে তিন বন্দি। গঠিত হয়েছে তদন্ত কমিটি।
দীর্ঘ বিক্ষোভের পর পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বিক্ষুব্ধ বন্দিরা শনিবার দিবাগত রাত ১ টার দিকে শান্ত হয়। জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে বন্দিরা তাদের সমস্যার কথা তুলে ধরে। এ সময় তাদের সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিলে বিক্ষোভ বন্ধ করে। এ ঘটনায় তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এদিকে বিক্ষোভের মধ্যেই তিন বন্দি কিশোর কৌশলে পালিয়ে গেছে। এ ঘটনায় কোতয়ালি থানায় একটি জিডিও হয়েছে।
জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান বলেন, বেশ কিছু দাবিতে বন্দিদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বন্দিরা বিক্ষোভ শুরু করে। এক পর্যায়ে তারা কেন্দ্রে ব্যাপক ভাঙচুর করেছে। আগুনও জ্বালিয়ে দেয়। সংবাদ পেয়ে আইনশৃংখলা বাহিনীর পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা সেখান যান। তাদের সাথে কথা বলার পর সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেয়া হয়েছে। তিন ঘণ্টা পর বিক্ষুব্ধ বন্দিরা শান্ত হয়। এই বিষয়ে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রধান করা হয়েছে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী সায়েমুজ্জামানকে।
এদিকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী সায়েমুজ্জামান বলেন, করোনাকালে কেন্দ্রের বন্দিদের বাইরে বের হতে দেয়া হয় না। এজন্য তাদের ক্ষোভ আছে। খাবারের মান নিয়ে অভিযোগ আছে। এছাড়াও সুপেয় পানির সমস্যা আছে। দৈনিক যে খাবার দেয়া হয় তাতে তাদের ক্ষুদ্ধা নিবারণ হয় না। এছাড়া বন্দিদের স্বজনরা যে খাবার দিয়ে যায় তাও ঠিকমত তাদের সরবরাহ করা হয় না। এ সব অভিযোগ আলোচনা করে পরিস্থিতি শান্ত করা হয়েছে।
কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক জাকির হোসেন সাংবাদিকদের জানান, বেশকিছু দিন ধরে কেন্দ্রে প্রত্যেক বন্দির জন্য দৈনিক ৭২ টাকা করে খাদ্যের বরাদ্দ দাবি তুলে আসছিলো। তাছাড়া কেন্দ্রেটিতে আলাদা আলাদা রুমে সিনিয়র জুনিয়র ভেদে খাদ্য সরবাহর ও সুযোগ সুবিধার দাবি তুলেছিলো। সেই দাবিতে শনিবার রাতে বন্দিদের মধ্যে বিক্ষোভ শুরু হয়। পরে কেন্দ্রের আনসার সদস্যরা বিক্ষোভ বন্ধে অভিযান চালান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে যশোর জেলা পুলিশের শতাধিক সদস্য অভিযান চালান। দেড়শজনের ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন কেন্দ্রে বর্তমানে আড়াইশ জন বন্দি আছে।
তিনি আরও জানান, গোলযোগে কয়েকজন বন্দি আহত হওয়ায় তাদের যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এছাড়া ডিবি পুলিশের এসআই মফিজুল ইসলাম বিক্ষুদ্ধদের ছোড়া ইটে আহত হয়েছেন। রোববার বিকেল ৫টার দিকে ফিরোজ নামে এক বন্দিকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সে রাজশাহীর তাহেরপুর এলাকার সাইফুল ইসলামের ছেলে।
যশোর জেনারেল হাসপাতলের চিকিৎসক আহমেদ তারেক শামস জানিয়েছেন, শিশুটির শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন নেই। তবে বিক্ষোভের সময় সে ভয় পেতে পারে। তবে চাঁচড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর রোকিবুজ্জামান শনিবার রাতে দৈনিক স্পন্দনকে জানিয়েছিলেন, বৈদ্যুতিক শকে একজন আহত হয়েছে বলে তিনি জানতে পারেছেন।
কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক জাকির হোসেন জানান, বিভিন্ন দাবিতে শনিবার রাত সাড়ে ১০ টার দিকে কেন্দ্রের ভিতর বিক্ষোভ ও ভাঙচুর শুরু করে। এই ঘটনার মধ্যে তিন বন্দি পালিয়ে গেছে। এরা হলো, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম হাতি গ্রামের মৃত আইউব আলীর ছেলে বাপ্পারাজ (১৬), বরগুনার আমতলী থানার উত্তরগদখালি গ্রামের মোস্তফা কাজীর ছেলে শাকিল (১২) ও নাটোরের কান্দিভিটা গ্রামের সাইফুল ইসলামের ছেলে সোহান (১৬)। তিন বন্দি পালানোর ঘটনায় রোববার কোতয়ালি থানায় জিডি করা হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী সায়েমুজ্জামান জানিয়েছেন, পালিয়ে যাওয়া তিন কিশোর অতীতের মতো ফিরে আসবে। না আসলে তাদের ফিরানোর ব্যবস্থা করা হবে।
এদিকে ঘটনাস্থলে একাধিক কর্মকর্তার নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পরিস্থিতি বুঝে পুলিশ প্রত্যাহার করা হবে বলে জানাগেছে। উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ১৩ আগস্ট যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে তিন বন্দি কিশোরের হত্যা ও ১৫ জনের আহত হওয়ার ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছিল। একাধিক বার একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হয়নি। ফলে কেন্দ্রে বার বার এমন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া বেশ কয়েকবার বন্দি কিশোর পালিয়ে যাওয়ার সংবাদ আছে। কেন্দ্রের কর্মীদের পাহারার অনিয়ম থাকায় বন্দিরা পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায় বলে অভিযোগ আছে কেন্দ্রে আবারো অগ্নিসংযোগ ভাংচুর তিন বন্দি লাপাত্তা
Leave a Reply