1. admin@dwiptv.com : dwiptv.com :
  2. dwiptvnews2121@gmail.com : sub editor : sub editor
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১১:০৫ পূর্বাহ্ন

যশোর বেনাপোলে  ‌‌দূর্দর্ষ শীর্ষ সন্ত্রাসী আকুল সহ চার সহযোগী ঢাকায় আটক: আটটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার

 উৎপল ঘোষ (ক্রাইম রিপোর্টার) যশোর
  • আপডেট: শুক্রবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১
যশোর বেনাপোলে  ‌‌দূর্দর্ষ শীর্ষ সন্ত্রাসী আকুল সহ চার সহযোগী ঢাকায় আটক: আটটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার
যশোর বেনাপোলে  ‌‌দূর্দর্ষ শীর্ষ সন্ত্রাসী আকুল সহ চার সহযোগী ঢাকায় আটক: আটটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার

যশোর বেনাপোলের কুখ্যাত আন্তর্জাতিক মানের চোরাকারবারী, অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ী দুর্ধর্ষ আকুলহোসাইনকে(৩৭)চার সহযোগীসহ আটক করেছে ঢাকার গোয়েন্দা পুলিশ।আকুল বেনাপোল পোর্ট থানার ঘিবা গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে। আটকের পর গোয়েন্দা পুলিশ ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত দুইশ’র বেশি অস্ত্র আকুল নিজে বিক্রি করেছে বলে সংবাদ সম্মেলন করে তথ্য দিয়েছে।

 

আটককৃতদের বিরুদ্ধে ডিএমপি এর দারুস সালাম থানায় মামলা হয়েছে। যার নম্বর- ২/২৮৯, তারিখ-০১ সেপ্টে:-২০২১, ধারা ১৯ এ ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইন। এসময় তাদের কাছ থেকে ব্যবহৃত ৮টি মোবাইলফোন ও একটি সিলভার রঙেরপ্রাইভেট কার জব্দ করা হয়েছে। যার নং ঢাকা মেট্রো-গ-২৭-৩৫৮০। চার সহযোগী আব্দুল আজীম (২৮) বেনাপোল পোর্ট থানার দূর্গাপুর গ্রামের মৃত ইহান আলীর ছেলে, ইলিয়াছ হোসেন (৩১) বড় আঁচড়া গ্রামের আমির আলীর ছেলে, মিলন হোসেন (৩৯) বেনাপোল গ্রামের মৃত মোসলেম আলী শেখের ছেলেও ফজলুর রহমান (৩৫) ভবেরবেড় গ্রামের আজিবর রহমানের ছেলে।

 

অভিযানে ৮টি বিদেশি পিস্তল, ১৬টি ম্যাগজিন ও ৮টি গুলি ও একটি প্রাইভেটকার উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগের তিনটি দল বুধবার রাতে মিরপুর, দারুস সালাম ও গাবতলী এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র চোরাচালানের একাধিক মামলা রয়েছে। আকুলের আটকের খবরে শার্শা বেনাপোলে ব্যাপক চাঞ্চল্যেকরসৃষ্টি হয়েছে। তার গডফাদার কারা ছিল, কার ছত্র ছায়ায় সে চলতো তাদের আটকের দাবি উঠেছে।

 

বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ আক্তার বলেছেন, ‘অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবসায়ীর একটি সংঘবদ্ধ দল দেশের সীমান্তবর্তী এলাকা যশোর জেলার বেনাপোল থেকে অস্ত্র ও গুলি সংগ্রহ করে সেগুলো সারা দেশে অপরাধীদের কাছে সরবরাহ করছিল। ‘বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে নিয়ে দেশের সীমান্তবর্তী যশোর জেলার বেনাপোল এলাকার কে বা কারা এসব অবৈধ অস্ত্র ব্যবসার সাথে জড়িত তা জানার জন্য গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করতে থাকে।’ তদন্তের এক পর্যায়ে গোয়েন্দা পুলিশের ধারণা বুধবার রাতে চোরাকারবারিরা অস্ত্র ও গুলি বিক্রির জন্য প্রাইভেটকার নিয়ে গাবতলী হয়ে ঢাকায় ঢুকবে।

 

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগের তিনটি দল দারুস সালাম এলাকার দিয়াবাড়ীগামী, বেড়িবাঁধগামী এবং কল্যাণপুরগামী রাস্তায় ওৎ পেতে থাকে। অভিযানের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, রাত আনুমানিক সোয়া ৩টার দিকে গাবতলী ব্রিজের ইউলুপ দিয়ে একটি প্রাইভেটকার দ্রুত গতিতে উত্তর দিকে যেতে থাকে। এ সময় দিয়াবাড়ী এলাকায় অবস্থান নেয়া গোয়েন্দা দলকে রাস্তায় ব্যারিকেড দিতে বলা হয়, অন্য দল দুটি প্রাইভেটকারটির পেছনে ধাওয়া করে। রাস্তায় চলাচলরত গাড়ি থামিয়ে রাস্তায় জট তৈরি করা হয়। অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ আক্তার বলেন, ‘জ্যামে আটকে পড়া গাড়িটিকে ডিবি পুলিশের সদস্যরা স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় ঘিরে ফেললে চালক এবং পেছনের সিটের একজন লাফিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় তাকে আটক করা হয়। ‘তাদের দেহ তল্লাশি করার সময় আকুল হোসাইনের কোমরের পেছনে প্যান্টে গোঁজা এক রাউন্ড গুলি ভর্তি একটি বিদেশি পিস্তল ও গলায় ঝুলানো হ্যান্ডব্যাগে ৫টি বিদেশি পিস্তল এবং ৫ রাউন্ড গুলি ও আটটি খালি ম্যাগজিন পাওয়া যায়।’

 

এছাড়া আব্দুল আজিমের কোমরে গোঁজা অবস্থায় এক রাউন্ড গুলিসহ একটি বিদেশি পিস্তল, ইলিয়াস হোসেনের কোমরে গোঁজা এক রাউন্ড গুলিসহ একটি বিদেশি পিস্তল পাওয়ার কথা জানিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। ওই দলের সহযোগী মিলন হোসেন ও প্রাইভেটকারের চালক ফজলুর রহমানকেও আটক করা হয়েছে বলে জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। হাফিজ আক্তার বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, চক্রের হোতা আকুল নিজে এবং তার বিশ্বস্ত লোকজনের মাধ্যমে বেনাপোল সীমান্ত এলাকা থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করে যশোর, খুলনা, বাগেরহাট, ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করে আসছিল। ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত দুইশ’র বেশি অস্ত্র আকুল নিজে বিক্রি করেছে।’

 

অস্ত্র চোরাচালান ছাড়াও এ চক্রের সদস্যরা ‘তক্ষক’নিয়ে সীমান্ত পিলার, সাপের বিষ, স্বর্ণ চোরাচালান,মুতি্ ইয়াবা, আইস এর মত মাদকের ব্যবসা করে আসছিল বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। বেনাপোলের স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বেনাপোল পৌরসভার এক প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধির হয়ে সে লক্ষণপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও তৎকালিন উক্ত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী কামাল হোসেন ও বাহাদুরপুর ইউনিয়ন যুবলীগের নেতা আশানুর রহমান আশাকে কুপিয়ে, বোমা মেরে ও গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়। এসময় তাদের সাথে থাকা যুবলীগ নেতা নজরুল ইসলামও ধারালো  দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে মারাত্মকভাবে আহত হয়। এসময় বন্দরের কার্যক্রম সেরে বাড়ি যাওয়ার সময় মারাত্বকভাবে আহত হয় পাশ দিয়ে যাওয়া বন্দর শ্রমিক শাহাদত, গুলিবিদ্ধ হয় পথচারী ভ্যানচালক শহিদুল ইসলাম। পরে স্থানীয়রা এসে তাদেরকে উদ্ধার করে যশোর সদর হাসপাতালে পাঠায় চিকিৎসার জন্য। যা নিয়ে বেনাপোল বন্দর এলাকায় আন্দোলন চলে এবং তা নিয়ে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের সকল কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো।

 

২০১৭ সালের ১৯ জানুয়ারি পুটখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম সিরাজের বেনাপোলস্থ অফিসের সামনে গিয়ে আকুল বাহিনী প্রধান আকুলসহ তার বাহিনীর সদস্যরা সিরাজকে পিস্তলের বাটের আঘাতে মাথা ও বুক ক্ষত বিক্ষত করে মৃত ভেবে ফেলে যায়। আরো জানা যায়, ২০১৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি অফিস চলাকালিন বেনাপোল কাস্টম হাউসে গিয়ে একটি টেন্ডার সংক্রান্ত বিষয়ে কাস্টমসের যুগ্ম কমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান ও উপ কমিশনার নিতিশ চন্দ্র এর উপর নগ্ন হামলা চালায় আকুলসহ তার বাহিনীর সদস্যরা। জামার কলার ধরে কিল ঘুষিসহ উপর্যুপরি মারধর করে। সে ঘটনায়ও আমদানি-রফতানি কার্যক্রম বন্ধসহ রাস্তায় দাঁড়িয়ে কালো ব্যাচ ধারণ করে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা করেন কাস্টম কর্তৃপক্ষ।

 

২০১৯ সালের ১৩ জুন বেনাপোল পৌর স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি জুলফিকার আলী মন্টুর উপর বোমা হামলার ঘটনায় ১৪ জুন আকুলের বেনাপোলস্থ ভাড়া বাড়িতে অভিযান চালায় নাভারণ সার্কেল এএসপি জুয়েল ইমরানের নেতৃত্বে পোর্ট থানার অফিসার ইনচার্জসহ সমস্ত ব্যাটালিয়ন। এসময় তার বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণের বোমা তৈরির সরঞ্জামসহ ৩ রাউন্ড পিস্তলের গুলি, ১২টি ম্যাগজিন, ৮টি দেশীয় অস্ত্রী ও ৩৩ বোতল ফেন্সিডিল উদ্ধার করা হয়। অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমানের রামদাসহ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। সে একজন আর্ন্তদেশীয় অস্ত্র ব্যবসায়ী। সে ভারত থেকে অস্ত্র বানিয়ে এনে বিক্রি করতো। আগে যাদেরকে ধরা হয়েছে তাদের তথ্যের ভিত্তিতে আকুলকে ধরা হয়েছে।

 

বেনাপোলের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এই আকুল ভারতসহ যশোরে একাধিক সন্ত্রাসী, চোরাচালানী, ছিনতাইকারি, অপহরণকারিসহ বিভিন্ন কূচক্রী চক্রের সাথে সখ্যতা রেখে দীর্ঘদিন অস্ত্র ও বিস্ফোরকদ্রব্য কেনাবেচা করে। সাথে গোল্ড পাচার ও ছিনতাই, হুন্ডি পাঁচার ও ছিনতাই, ইয়াবা, আইস, ফেন্সিডিল কেনা-বেচা ও ছিনতাই করে রাতারাতি কোটিপতি বনে গেছে। তার সম্পর্কে আরো কিছু জানলে ভয়ে শরীরের লোম শিউরে উঠবে। বেনাপোল পোর্ট থানায় অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মামুন খান বলেন, আকুেলর নামে বেনাপোল পোর্ট থানায় ৪টি মামলা রয়েছে।  বিস্ফোরক ও মারামারি আইনে মামলা নং ০১, তারিখ- ১ জুলাই-২০১৪, মামলা নং-১৭, তারিখ-১৭ফেব্রয়ারি-১৬, মামলা নং ১৮, তারিখ- ৮জুলাই-১৭, দ্রুত বিচার আইনে মামলা নং ২৮, তারিখ-৭ সেপ্টেম্বর-১৮। এছাড়া ২০১৯ সালে আওয়ামী লীগের অফিস ভাঙচুর ও আকুলের বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণের অস্ত্র উদ্ধারের মামলা ছিলো।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন

আমাদের এন্ড্রয়েড এপস আপনার মোবাইলে ইন্সটল করুন।

Developer By Zorex Zira