যশোর জেলার শ্রীধরপুর ইউনিয়নের উত্তরে শেখহাটি ইউনিয়ন ও নড়াইল সদর উপজেলা, দক্ষিণে বাঘুটিয়া ইউনিয়ন,পূর্বে নড়াইল জেলার বিছালী ইউনিয়ন এবং পশ্চিমে ভৈরব নদী অবস্থিত। শ্রীধরপুরের জমিদার বাড়িটি যশোর জেলার একটি ঐতিহাসিক কীর্তিস্মারক। যশোর হতে ভাঙ্গাগেট কিংবা খুলনা হতে ভাঙ্গাগেট নেমে ভৈরব নদের উপর নির্মিত সেতু হতে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে শ্রীধরপুর জমিদার বাড়ি।
ভারতের হুগলি হতে আগত জমিদার বনমালী বসু অষ্ঠাদশ শতকে জমিদারবাড়িটি প্রতিষ্ঠা করেন।জমিদারবাড়িতে ব্রিটিশ আমলে একটি ডাক্তারখানা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। য়তৎকালীন বিখ্যাত হেকিমগণের পরিচালনায় এটি যশোর – খুলনা অঞ্চলের একটি বিখ্যাত চিকিৎসাকেন্দ্র হিসেবে প্রসিদ্ধ পেয়েছিল। অভয়নগর দেয়াপাড়া গ্রামের জ্ঞানেন্দ্রনাথ কাঞ্জিলাল ছিলেন উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ হোমিও ডাক্তার।তিনিও এই চিকিৎসা কেন্দ্রে কিছুদিন কাজ করে গেছেন। জমিদার বাড়ির ডাক্তারখানাটি বর্তমানে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
জমিদার বাড়ির সামনে একটি বিশাল পূজা মন্ডপ ছিল। এটি এখন আর নেই।পুজা মন্ডপের পাশের মাঠে এখন পুলিশ ফাঁড়ি ও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার কাজ চলছে। জমিদার বনমালী বসু এখানে একটি নাট্যশালা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। নাট্যশালায় নৃত্যগীত পরিবেশন ও বিভিন্ন নাটক হত।কলকাতা ও ঢাকা হতে বড় বড় শিল্পীরা এখানে আসতেন। এত বড় নাট্যশালা তৎকালীন আমলে আর কোথাও খুব বেশি ছিল না।
শ্রীধরপুর জমিদার বাড়ির নাট্যশালাটি ছিল যশোর অঞ্চলের প্রথম পরিকল্পিত ও আধুনিক নাট্যশালাগুলোর অন্যতম। নাট্যশালাটি কালের ছোবলে সবকিছু হারিয়ে গেছে। জমিদারবাড়ির সংলগ্ন কালিমন্দিরটি এক সময় সারাক্ষণ লোকসমাগমে সরগম থাকত।প্রায় তিনশত বছরের প্রাচীন এ মন্দিরটি এখন জরাজীর্ণ অবস্থায় স্মৃতির কোড়ক হয়ে প্রায় নিঃশেষ হওয়ার অপেক্ষায়। জমিদারগণ পানীয় জলের অভাব দূরীকরণের জন্য তিনটি দীঘি খনন করেছিলেন।কালিবাড়ি সংলগ্ন দীঘিটি কালীর দীঘি। উত্তর পোতার দীঘিটি উত্তর দীঘি এবং বাকি দীঘিটি মল্লিক দীঘি। উত্তর দীঘি ও কালীবাড়ি দীঘি এখনও শ্রীধরপুর জমিদারগণের স্মৃতি বহন করে চলেছে। জমিদারটি এত বড় ছিল যে,তা ভেঙ্গে না ফেললে একটি বিরাট বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা কলেজ করা যেত যা এলাকা বাসীর অভিমত।
Leave a Reply