ফরিদপুরের মধুখালীতে ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করার জেরে মিথ্যা অপবাদ সইতে না পেরে এক অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধু গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যার অভিযোগ উঠেছে। ১৬ মে-২০২১ রবিবার সকালে ওই গৃহবধুর মরদেহ উদ্ধার করে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেছে মধুখালি থানা পুলিশ।
ওই গৃহবধুর নাম রীমা রানী সাহা (২২)। সে উপজেলার নওপাড়া ইউনিয়নের আড়কান্দি গ্রামের পলাশ কুমার সাহার স্ত্রী। পলাশ সাহা মধুখালী বাজারের মুদি ব্যবসায়ী। গৃহবধু রীমা ৫মাসের অন্তঃস্বত্তা ছিলেন। শ্বশুর বাড়ি থেকেই রীমার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
জানা যায়, ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার নওপাড়া ইউনিয়নের আড়কান্দি গ্রামের বাসিন্দা প্রভাষ কুমার সাহার ছেলে পলাশ কুমার সাহার সাথে চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার নানবার গ্রামের বাসিন্দা নিশ্চিন্ত কুমার সাহার মেয়ে রীমা রানী সাহার দীর্ঘ চার বছর আগে পারিবারিকভাবে বিবাহ হয়। বিয়ের পর থেকে তারা সুখে শান্তিতেই সংসার করছিল।
সম্প্রতি ‘সুখতারা’ নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে রীমা সাহার নামে বিভিন্ন অপবাদ ছড়িয়ে দেওয়া হয়। মিথ্যা অপবাদ সইতে না পেরে শনিবার (১৫ মে) বিকালে শ্বশুর বাড়ির ঘরের আড়ার সাথে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন গৃহবধু রীমা।
গৃহবধু রীমার শ্বশুর প্রভাষ সাহা বলেন, কয়েকদিন আগে একটি অচেনা মোবাইল নম্বর থেকে আমার মোবাইলে কল আসে। অপর পাশ থেকে বলা হয়, আমার পুত্রবধুর চরিত্র খারাপ, তার এক যুবকের সাথে পরকিয়া সম্পর্ক রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন খারাপ কথাবার্তা বলে। আমি তার পরিচয় জানতে চাইলে সে পরিচয় দিতে রাজি হয়নি। এমনকি বলেছি প্রমান দিতে, তখন সে বলে প্রমান যেদিন দিতে পারবো সেদিনই আমার পরিচয় জানতে পারবেন।
নওপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৮নং ওয়ার্ডের সদস্য অসিম কুমার সাহা বলেন, প্রভাষ সাহার পুত্রবধু রীমাকে নিয়ে ফেসবুকে কারা যেন আজে বাজে কথা ছড়িয়ে দেয়। এসব কথা সহ্য করতে না পেরে মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে।
মেয়ে রীমার মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে ছুটে এসেছেন মা শিউলি রানী সাহা। তার আহাজারিতে আশ আশপাশের পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। কান্নাজড়িত কন্ঠে শিউলি রানী বলেন, আমার মেয়ে আত্মহত্যা করেনি। আমার মেয়েকে ওরা হত্যা করেছে। মেয়ের নামে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে তাকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করা হয়েছে। মেয়ে হত্যার বিচার চাই।
মধুখালী থানা অফিসার ইন চার্জ মোঃ সহিদুল ইসলাম জানান, গৃহবধু রীমার মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। রীমা কি আত্মহত্যা করেছে, নাকি তাকে হত্যা করা হয়েছে বিষয়টি তদন্তে কাজ করছে পুলিশ। ময়না তদন্তের প্রতিবেদন হাতে পেলেই বিষয়টি জানা যাবে।
তিনি আরো বলেন, এছাড়া রীমাকে নিয়ে যারা মোবাইলে ও ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে বিভিন্ন মন্তব্য করেছে সেই বিষয়েও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। তাদের খুঁজে বের করতে ইতিমধ্যেই অভিযান পরিচালনা শুরু হয়েছে। মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন
Leave a Reply