কুমিল্লার নাঙ্গলকোট সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের বিষয়ে পর পর দুটি সংবাদ জাতীয় ও আঞ্চলিক কয়েকটি পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পরও দুর্নীতি বন্ধ হচ্ছে না। অফিস সহকারী ফিরোজ মিয়া, দলিল লেখক সমিতির সভাপতি মোঃ সোলায়মান ও সেক্রেটারী আবুল হোসেন সিন্ডিকেটে দেদারছে চলছে নানা অনিয়ম-দূর্নীতি। এনিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নাঙ্গলকোট সাব রেজিষ্ট্রি অফিস থেকে সেবাগ্রহীতা, নতুন দলিল লেখক ও সচেতন মহল। জানা গেছে, গত কয়েকদিন যাবৎ নাঙ্গলকোট সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে দলিল রেজিষ্টারের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমান সাব রেজিষ্টার আবু বকর ছিদ্দিক অফিস থেকে বদলি গয়ে অন্যত্র চলে যাবেন-এমন প্রচার চালিয়ে দলিল লেখন জনসাধারণকে বুঝাচ্ছে যে, পরবর্তী সাব রেজিষ্টার কখন আসবেন তার কোন নিশ্চয়তা নেই। তাই জনসাধারণ গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার অন্যান্য দিনের তুলনায় দ্বিগুন দলিল রেজিষ্ট্রি করেছে।
পরপর দুই বার একটি সাপ্তাহিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর দলিল লেখক সমিতির কয়েকজন কর্মকর্তা ওই পত্রিকার সম্পাদকের সাথে সাক্ষাত করেন। সাক্ষাতকালে দলিল লেখক সমিতির সভাপতি মোঃ সোলায়মান, সেক্রেটারী আবুল হোসেন, দলিল লেখক মাহবুবুল আলম ও দুলাল ভেন্ডার তাদের বিষয়ে ও সাব রেজিষ্টার অফিসের ব্যাপারে লেখালেখি না করার অনুরোধ করেন। তবে দলিল লেখক আবুল বশর, সহিদুল ইসলাম, ছৈয়দ আহাম্মদের দেওয়া বক্তব্য সম্পর্কে সমিতির কর্মকর্তাগণ কোন সদুত্তর দিতে পারেনি। দলিল লেখক সহিদুল ইসলামের অভিযোগ ছিল সমিতির কর্মকর্তাগণ ও অফিস সহকারী ফিরোজ মিয়া মিলে সিন্ডিকেট পূর্বক অতিরিক্ত টাকা আদায় করে আসছিল। তিনি আরও অভিযোগ করেন, অতিরিক্ত টাকা না দিলে তাদের হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়। প্রতিটি হেবা দলিলে অফিসে ৩০০০-৩৫০০ টাকা বাধ্যতামূলক দিতে হয়।
দলিল লেখক আবুল বশর বলেছিলেন, আমাদের পাশ^বর্তী গুণবতী ও চৌদ্দগ্রাম অফিসে প্রতিটি হেবা দলিলে ১৫০০ টাকা দিতে হয়। আমাদের নাঙ্গলকোট অফিসে কয়েকজন মিলে অফিসের সাথে সম্পর্ক রেখে ৩-৪ হাজার টাকা আদায় করে। বক্সগঞ্জ এলাকার দলিল লেখক মোস্তফা মিয়া মানু জানান, আমাদের অফিসে হেবা দলিলে ৩৮০০ টাকা দিতে হয়। তিনি বলেন, স্ট্যাম্পসহ সব খরচ মিলিয়ে ৫০০০ টাকা খরচ হয়ে যায়। দলিল লেখক ছৈয়দ আহাম্মদ বলেছেন, একটি হেবা দলিল রেজিষ্ট্রি করতে ১০ হাজার টাকা লাগবে। অফিসের জন্যই লাগবে ৫০০০ টাকা খরচ। এ বিষয়ে দলিল লেখক সমিতির কর্মকর্তাগণ কোন প্রকার মন্তব্য করেননি। সাংবাদিক তাদেরকে প্রশ্ন করেছিলেন, নতুন দলিল লেখকগণ সমিতিকে টাকা দেয় কি না? জবাবে দলিল লেখক সমিতির সভাপতি মোঃ সোলায়মান জানান, হ্যাঁ তারা চাঁদা দেন।
এছাড়াও নতুন দলিল লেখক কারা কারা অভিযোগ করেছে তাদের নাম জানতে চান। এর আগে সমিতির সভাপতি সোলায়মানও এ তথ্য জানতে চান। গত ৯ জুন নাঙ্গলকোট সাব রেজিস্টার অফিসে একটি বন্ধকী সম্পত্তি রেজিষ্ট্রি করতে যান পাটোয়ারী জেনারেল হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম পাটোয়ারী। তিনি দলিল রেজিষ্ট্রির জন্য অফিসের নকলকারক উল্লাখালীর সাইফুলের মাধ্যমে উপস্থাপন করেন। সাইফুল ইসলাম অফিসের জন্য ৭০০০ টাকা এবং নকলের জন্য ৪০০০ টাকা দাবি করে। এ বিষয়ে সাংবাদিক সাব রেজিষ্টার আবুল বকর ছিদ্দিককে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে জানান। পরবর্তীতে অফিসের অতিরিক্ত টাকা বাদ দিয়ে নকলের জন্য ৩৮০০ টাকা সাইফুল ইসলামের নিকট থেকে অফিসের পিয়ন শাহিন মিয়া নিয়ে যান। আলোচিত সকল প্রকার অতিরিক্ত টাকা আদায়ের মূল হোতা অফিস সহকারী ফিরোজ মিয়া। তিনি দলিল লেখক সমিতির কয়েকজন কর্মকর্তা ব্যতিত সকল দলিল লেখকের সাথে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য ব্যবহার করেন।
তিনি সাদা কাগজে তালিকা করে ৩-৪ হাজার টাকা করে প্রতি দলিলে আদায় করেন। আদায়কৃত টাকার বেশির ভাগ অফিস সহকারী আত্মসাত করেন বলে কয়েকজন দলিল লেখক নাম না প্রকাশ করা শর্তে মন্তব্য করেন। সাদা কাগজে দলিল লেখকগণের নাম লিখে আদায়কৃত টাকা হস্তগত করার স্থির চিত্র প্রতিবেদক প্রত্যক্ষ করেন। আদায়কৃত টাকা রাখ ডাক না করেই প্রকাশ্যে গ্রহণ করা হয়। কে বা কারা উক্ত আদায়কৃত টাকার মালিক তা জানতে চাইলে সাব রেজিষ্টার ও অফিস সহকারী কেউই স্বীকার করছে না। সরেজমিন তথ্য নিয়ে জানা যায়, উক্ত টাকা আদায় ও আত্মসাতে সাব রেজিস্টার, অফিস সহকারী, দলিল লেখক কর্মকর্তাগণ জড়িত।
Leave a Reply