1. admin@dwiptv.com : dwiptv.com :
  2. dwiptvnews2121@gmail.com : sub editor : sub editor
বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:৪৭ অপরাহ্ন

জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ, যশোরের ইট ভাটাগুলো জনস্বাস্থ‍্য ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি

উৎপল ঘোষ (বিশেষ প্রতিনিধি ) যশোর :
  • আপডেট: বৃহস্পতিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২১
জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ, যশোরের ইট ভাটাগুলো জনস্বাস্থ‍্য ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি

দেশে সরকার স্থাপনা নির্মাণে ইটের বিকল্প হিসেবে কংক্রিট ব্লক অথবা ফাঁপা ইট ব‍্যবহারের কথা বললেও তা এখনো জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি।এ নিয়ে ইট ভাটার মালিকদের কোনো আগ্রহও দেখা যাচ্ছে না। এ কারণে কমেনি প্রচলিত ইটের ব‍্যবহার। ভাটার কালো ধোঁয়ায় আশপাশের বৃক্ষসহ পরিবেশ মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। এ জন্য জনস্বাস্থ‍্য ও পরিবেশের জন‍্য প্রত‍্যক্ষ হুমকি স্বরূপ ইট ভাটাগুলো কোনো ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।এখনও ভাটা মালিকগং বহাল তবিয়তে সোনাতনী পদ্ধতিতে মাটির ইট পুড়িয়ে যাচ্ছে। জানা গেছে, গত বছরের ১৪ জানুয়ারি প্রধান মন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সরকারের যে কোনও  নির্মাণ কাজে বিকল্প ইট হিসেবে পরিবেশ বান্ধব ফাঁপা ইট ব‍্যবহার করতে হবে বলে নির্দেশনা দেয়া হয়। আজ প্রায় এক বছর অতিবাহিত হলেও তার কোনো নমুনা ভাটার মালিকগংদের ভিতর কোনো সাড়া মিলছে না। তাই প্রবাদে আছে চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনি। নির্দেশনায় বলা হয় গৃহ নির্মাণ গবেষণা প্রতিষ্ঠান হাউজিং এ‍্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনষ্টিটিউট (এইচ বি আর আই ) উদ্ভাবিত বিকল্প এই ইট পরিবেশ বান্ধব ও অর্থ সাশ্রয়ী। তাই এই  বিকল্প ইট সরকারি কাজে ব‍্যবহারের জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়। সেখানও অপ্রতুল। জানা গেছে,সহজ প্রযুক্তি স্বল্প শ্রমে এটা তৈরি করা যায়। এই ইট শব্দ ও তাপ নিরোধক, পরিবেশ বান্ধব, এই ইট তুলনামূলক কম ওজনের হওয়ায় ভূমিকম্পেরও ঝুঁকি কম। একটি ব‍্যায় সাশ্রয়ী পরিবেশ বান্ধব ও দূর্যোগে সহনীয় নির্মাণ সংস্কৃতি গড়ে তুলতে সরকারি সব নির্মাণ প্রকল্পে বিকল্প নির্মাণ প্রযুক্তি ও উপকরণ ব‍্যবহার নিশ্চিত করতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়। বলা হয় সরকারি উন্নয়ন কাজে কার্যকর হলে বেসরকারি নির্মাতারাও এ সব উপকরণ ব‍্যবহারে এগিয়ে আসবে।এ লক্ষ্য নিয়েই প্রধান মন্ত্রীর দফতর থেকে সরকারি উন্নয়ন কাজে বালু বা পাথরের গুঁড়া ও সিমেন্ট মিশ্রন করে বিকল্পভাবে তৈরি হয় এই ফাঁপা ইট ব‍্যবহারের নির্দেশনা দেয়া হয়। যার স্থায়িত্ব সনাতনী ইটের চেয়ে অনেক বেশি।তবে এ সিদ্ধান্তের কোন অগ্রগতি দেখা যায়নি।সরকারি উন্নয়ন কাজে এখনও বিকল্প ফাঁপা ইট ব‍্যবহার হচ্ছে না।সংশ্লিষ্ঠ সুত্রগুলো বলছে,যারা বাস্তবায়ন করবে তারাই এই ব‍্যপারে উদ‍্যেগ নিচ্ছে না।ফলে এখনও বিকল্প ইটের ব‍্যবহার আরম্ভ হয়নি। ভাটাগুলো আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে বীরদর্পে তারা তাদের পুরাতন ব‍্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে যা দেখার কেউ নেই। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প সড়ক ও গৃহ নির্মাণে তাই বিপুল পরিমাণে ব‍্যবহৃত হচ্ছে মাটি পুড়িয়ে তৈরি হচ্ছে সনাতনী ইট।আর বন উজাড়,কৃষি জমির উপরিভাগের টপ সয়েল মাটির ক্ষতি,ও দেশের ভূ- প্রকৃতি ধ্বংস করে মাটি পুড়িয়ে তৈরি করা হচ্ছে এসব ইট।ফলে ইট ভাটার সংশ্লিষ্ট এলাকার  পাশাপাশি সারা দেশেই পরিবেশ ও জনস্বাস্থ‍্য মারাত্মক ঝুঁকিতে ফেলেছে। সেই সাথে দানব ট্রাকটরের ইট ও ভাটার মাটি যাতায়াতের কারনে গ্রামীণ সড়কগুলো ক্ষতি করছে মারাত্মকভাবে।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ইট ভাটার কারণে পরিবেশ দূষণ,ভূমির উর্বরতা হ্রাস ও বনভূমি মারাত্মকভাবে উজাড় হচ্ছে। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে দিন দিন কৃষি জমি জমি কমছে।ইট ভাটাতে মাটি জোগান দিতে ফসলি জমি অকেজো গর্তে পরিণত হচ্ছে।কেবল সমতল ভূমি নয়,কোথাও কোথাও পাহাড় পযর্ন্ত কাটা হয়  ইট ভাটার মাটি জোগাড় করার জন‍্য।
এদিকে জেলার বাইরে বিভিন্ন হাইওয়ে ও গ্রামীণ সড়কের দুই পাশে যতদুর চোখ যায় শুধু ইটের ভাটা। এসব ইটের ভাটায় কয়লার পাশাপাশি কাঠও পোড়ানো হয় দেদারছে যা দেখার কেউ নেই। অথচ কাঠ পোড়ানো নিষিদ্ধ। ফসলি জমিতে লোকালয়ে এসব ইট ভাটার চিমনির উচ্চতা কোনটি ৬০- ৯০ফুট।অথচ চিমনি থাকতে হবে ১২০ ফুট উচ্চতা।ইটের ভাটা চিমনি থেকে নির্গত কালো ধোঁয়ায় ভাটা এলাকার বাসিন্দারা আজ জ্বলছে। এমনকি আশপাশের গাছগুলো সব মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে। গাছের পাতাগুলো শুকিয়েপযর্ন্ত ঝরে পড়েছে।এছাড়া দেশের ইট ভাটাগুলোয় বছরে প্রায় ৫৭ লাখ টন কয়লা এবং কোনো কোনো ভাটায় গোপনে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।ফলে পরিবেশ ও বায়ূ দুষন হচ্ছে। এদিকে দেশে ইট ভাটার জন্য ৫৮%পরিবেশ দূষন হয় বলে জানিয়েছেন পরিবেশ ও জলবায়ু মন্ত্রী মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন। তিনি বলেন,বায়ূ দূষন রোধে আমরা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি।জেলা শহরে বায়ুর মান নিরুপনের জন‍্য ১৬ ক‍্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে বায়ুর মান নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।তিনি আরো বলেছেন, আমাদের ৫৮ ভাগ বায়ু দূষন যা ঢাকা সিটি ইট ভাটার জন্য। ইট ভাটা বন্ধের জন্য পরিকল্পনা ও আইন পাশ করা হয়েছে। ৬৫ ভাগ ইট বায়ু দূষন যাতে না হয় সেই পরিকল্পনা আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।আমরা শতভাগ বাস্তবায়ন করতে পারব বলে আশা করছি।
সুত্র মতে,আগামি ২০২৪- ২৫ অর্থ বছরের মধ্যে ইট সম্পুর্ন নিশিদ্ধ করে ব্লক ব‍্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সরকারি নির্মাণ মেরামত ও সংস্কার কাজে ইটের ব‍্যবহার সম্পুর্ন বন্ধ করার জন্য চলতি অর্থ বছরে ২০১৯ -২০ ডেন্ডার ডকুমেন্টসে ব্লক ব‍্যবহারের হার ১০ শতাংশ, ২০২০- ২১অর্থ বছরে ২০ শতাংশ,২০২১ -২২ অর্থ বছরে ৩০ শতাংশ, ২০২২ -২৩ অর্থ বছরে ৬০ শতাংশ,২০২৩ – ২৪ অর্থ বছরে ২৪ শতাংশ এবং ২০২৪ – ২৫ অর্থ বছরে শতভাগ নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০২৪ – ২৫ অর্থ বছরের মধ্যে ইটের ব‍্যবহার বন্ধ করে ব্লকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিষয়ে সুপারিশ দিতে পরিবেশ ও বন মন্ত্রালয়,স্থানীয় সরকার বিভাগ,গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়,হাউজিং অ‍্যাণ্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনষ্টিটিউট,স্থাপত‍্য অধিদপ্তরের প্রতিনিধিকে দিয়ে একটি কারিগরি কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, নির্মাণ কাজে ব্লকের ব‍্যবহার যত বাড়বে এবং উৎপাদনও তত বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে মাটি পুড়িয়ে ইট তৈরি ভাটাগুলোর দৌরাত্বও সে অনুযায়ী কমে যাবে।তিন ফসলি কৃষি জমিও দিন দিন কমে যাবে। এখন দেশে দরকার শুধু প্রশাসনের হস্তক্ষেপ।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন

আমাদের এন্ড্রয়েড এপস আপনার মোবাইলে ইন্সটল করুন।

Developer By Zorex Zira