প্রত্যেক পরিবারের উচিত অন্তত তিনটি করে গাছ লাগিয়ে ও আবাদী জমির টপ সয়েল বিনষ্ঠ এবং পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত থেকে দেশ ও জাতীকে রক্ষা করার আহবান ছিল স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর।কিন্তু এক শ্রেণীর অতি মুনাফালোভী ব্যক্তিরা সে আহ্বান পদভ্রুষ্ঠ করেই ইট ভাটা মৌসুম সামনে রেখে ফঁড়িয়াদের দাদন দিয়ে গাছ আবাদী জমির উপরের টপ সয়েল নিধন যজ্ঞের মহোৎসবে মেতেছে।
বৃক্ষ উজাড়ের ফলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য আশংকা জনকভাবে ক্ষতি হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন লক্ষণীয়। প্রকৃতির আচরণ ক্রমান্বয়ে চলে যাচ্ছে প্রতিকূলে। এসব কারণে বৃষ্টিপাত হ্রাস, জলোচ্ছাস,প্রবল টর্ণেডো ও ঘুর্ণিঝড় যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে পরিবেশবিদদের কাছে প্রতিয়মান হয় জলবায়ু ক্রমান্বয়ে যাচ্ছে চরম ভাবাপন্ন পরিণতির দিকে। তাতে জীব ও উদ্ভিদ জগত সংকটপন্ন বিপন্নের দিকে।
নানাভাবে পরিবেশ দূষণের ফলে বাতাসে সীসা, পারদ,সালফার ডাই অক্সাইড, কার্বন ডাই অক্সাইড,কার্বন মনো অক্সাইড এ ক্ষতি থেকে মানুষকে রক্ষা করে একমাত্র গাছ। তাপমাত্রা রোধ করে যে গাছ আর সেই জীবন রক্ষাকারী পরিবেশ বান্ধব নিধন চলছে নির্বিচারে যা দেখার কেউ নেই। এর জন্য দায়ী দেশের জনগণ। এদের মধ্যে নেই কোন সচেতনতা। আর যারা দায়িত্বে আছেন তাদের মধ্যে কতিপয় কিছু আমলা রয়েছেন অর্থের কাছে তারা সন্তুষ্ট। অনেক ভাটা রয়েছে যাদের কোন বৈধ কাগজপত্র নেই।এমনকি পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রও নাই বলে অভিযোগ রয়েছে।
নিবিড় বৃক্ষ শোভিত বন – বনানী শুধু সৌন্দর্য রক্ষা করে না বরং গাছ দেয় খাদ্য ও প্রকৃতির ভারসাম্য। রক্ষা দূষণ প্রক্রিয়াকে করে প্রতিরোধ, বাসস্থান তৈরির উপকরণ,স্বাস্থ্য রক্ষা রোগ নিবারণের প্রধান উৎস, অধিক বৃষ্টিপাতের সহায়ক,নদী ভাঙ্গন ও মাটি ক্ষয় রক্ষা করে এবং তাপ প্রতিরোধ করে। আসবাবপত্র ও সহ মানুষের দৈনন্দিন সকল কাজে গাছ ব্যবহার হয়ে থাকে। অনেক বৃক্ষ ঔষধের গাছ হিসেবে ব্যবহার হয়। কিন্তুু দেশের ইট ভাটাগুলোতে কয়লার পরিবর্তে যে হারে গাছ ব্যবহৃত হয় তাতে অচিরেই গাছ শুন্য মরুতে পরিণত হতে চলেছে দেশে।
সরকার পরিবেশ রক্ষায় প্রানবন্ত চেষ্ঠা চালাচ্ছেন। বন সৃষ্টিতে বৃক্ষ রোপণ অভিযান সপ্তাহ পালনসহ নানা প্রচেষ্টা চললেও অপরিকল্পিত ভাবে গাছ উজাড় করে নগরায়ন সৃষ্টি করা হচ্ছে। ফলে মারাত্মকভাবে কমে যাচ্ছে আবাদী জমি। ইটভা গুলো নির্মাণে প্রচুর জমি দখল করার অভিযোগ রয়েছে। আর সেই জমিগুলো অধিকাংশ তিন ফসলি। এর আর একটি অভিযোগ তা হলো কৃষকদের ফুসলিয়ে হাতে নুন্যতম অর্থ ধরিয়ে দিয়ে আবাদী জমির উপরি অংশের প্রায় দেড় ফুট অধিক মাটি কেটে নিয়ে চরমভাবে উর্বর জমির শক্তি নষ্ঠ করা হচ্ছে।প্রতি মৌসুমে একটি ইট ভাটায় ইট পোড়াতে লাখ লাখ মন কাঠ ব্যবহার করা হয়। জেলায় প্রায় শতাধিক ইট ভাটায় বিপুল পরিমাণ জমি আটকিয়ে রাখা হয়েছে। যে হারে নিধন চলছে সে তুলনায় বৃক্ষ রোপন অপ্রতুল।
তথ্যনুসন্ধানে জানা যায় ,পরিবেশ অধিদপ্তর বিভাগের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা ভাটা মালিকদের নিকট থেকে অর্থে তুষ্ঠ হয়ে থাকেন।পরিবেশ দূষনের কাতারে তারাও শামিল। বর্তমানে বনভূমি প্রায় ১০ ভাগে দাড়িয়েছে বলে বিজ্ঞজনদের ধারণা। যে কোন দেশের ভূখণ্ডের তুলনায় ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা দরকার। সেই তুলনায় আমাদের ৫৫,৫৯৮ বর্গমাইলের তুলনায় বনভুমি আছে মাত্র ৮,৫৯৪ বর্গমাইল তথা ১৬ ভাগ বনভুমি। দেশের ইট ভাটার মালিকেরা আইওয়াশ করতে যে ছলনার আশ্রয় নেন আর তা হলো লোক প্রদর্শনে কিছু কয়লা আর তৎসামাম্য কাঠ ভাটার পাশে স্তুপাকারে রেখে দেয়। তা নাম মাত্র ব্যবহার করা হয়। সরেজমিনে ৫০ টি ইট ভাটায় গিয়ে জানা যায়, এক মৌসুমে দুই থেকে তিন ট্রাক কয়লা কয়লা এনে যৎ সামান্য ব্যবহার করা হয়। অনতিদূরে গোপন আস্তানায় কাঠের বিশাল পাহাড় সমান স্তুপ মজুদ থাকে। রাতের আঁধারে যানবাহনে ভাটায় এনে দেদারছে ক পোড়ানো হয়। এভাবে বন – বনানীর নিধন অব্যহত থাকলে অচিরেই ধ্বংস হবে বা হচ্ছে পশুপাখি এবং পরিবেশ চলে যাবে প্রতিকুলে। তাপ বৃদ্ধি পাবে। বাতাস দূষিত মানুষ আক্রান্ত হবে।শ্বাসকষ্ঠ, মাথা ধরা,হাপানী, দীর্ঘস্থায়ী, ব্রনকাইটিস,ফুসফুসে ক্যান্সার সহ নানা জটিল ও কঠিন রোগে ধীরে ধীরে আক্রান্ত হবে মানুষ। দেশের অধিকাংশ ইট ভাটাগুলো জন ঘনবসতিপৃর্ণ এলাকায় ও হাইওয়ে রোডসহ গ্রামীণ সড়ক ঘেঁষে নির্মাণ করেছে ইটভাটা যা নিয়ম বহির্ভূত। মাটি বহনকারী দানব ট্রাকটরে ক্ষতি করছে গ্রামীণ সড়কগুলো বর্তমানে যা চলাচলের অণুপযোগী হয়ে পড়েছে।রাস্তার ধুলাবালিও অপ্রতুল। যার কারণে পরিবেশও মারাত্মকভাবে ক্ষতি হচ্ছে। তাই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নিরাপদ দেশ ও জাতী গড়ে তোলার জন্য যে কোন মুল্যে পরিবেশ দূষণ রোধ করার প্রয়োজন অনস্বীকার্য। উল্লেখিত কৃষি জমির টপ সয়েলের মাটিকাটা,দানব ট্রাকটর গ্রামীণ সড়কে চলাচল বন্ধ ও বৃক্ষ নিধন প্রক্রিয়া রোধ সরকারকে কঠোর ও বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিতে হবে যার কোন বিকল্প নেই।
Leave a Reply