অবশেষে ভাসানচর মুখি হচ্ছে রোহিঙ্গারা। প্রথম দফায় রোহিঙ্গাদের একটি দল ভাসানচরে যাবার কথা রয়েছে। ভাসানচরে গিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে আগ্রহী রোহিঙ্গারা।
এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর অব্যাহত চাপের মুখেও সরকার এক লাখ রোহিঙ্গা ভাসানচরে নিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত থেকে পেছনে ফিরছে না। এসব কারণে শেষ পর্যন্ত রোহিঙ্গারাও ভাসানচরে যেতে এখন সম্মতি জানাতে শুরু করেছে বলে জানা গেছে।
কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) ও সরকারের অতিরিক্ত সচিব শাহ রেজোয়ান হায়াত জানিয়েছেন- ‘ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের প্রথম দফায় স্থানান্তরের দিনক্ষণ এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। তবে আগামী সপ্তাহ নাগাদ রোহিঙ্গাদের প্রথম দলটি পাঠানোর যাবতীয় প্রস্তুতি রয়েছে।’ তিনি জানান, প্রথম দফায় স্বল্পসংখ্যক রোহিঙ্গাকে নেওয়া হবে ভাসানচরে। এভাবে দফায় দফায় ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের পাঠানো হবে।
সাম্প্রতিক সময়ে রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে সংঘটিত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিয়ে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী সংস্থার সদস্যরা বেশ কঠোর ভূমিকা নেওয়ার পরই পরিস্থিতি পাল্টে যেতে থাকে।
অভিযোগ রয়েছে, বিদেশী নানা গোষ্ঠীর মদদে এতদিন রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে যেসব সন্ত্রাসী রোহিঙ্গারা ভাসানচর বিরোধী অপপ্রচার চালিয়ে আসছিল তারা এখন এক প্রকার ঝিমিয়ে পড়েছে। বিশেষ করে রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে কর্মরত সরকারি কর্মকর্তারা ভাসানচরের ব্যাপারে কঠোর হবার পরই রোহিঙ্গারা ভাসানচর মুখি হতে শুরু করেছে।
কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক নুর মোহাম্মদ সিকদার এ প্রসঙ্গে অভিযোগের সুরে বলেন-‘আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীগুলো কেবল নিজেদের সুযোগ-সুবিধার জন্যই দীর্ঘদিন ধরে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরে নানাভাবে বাধা দিয়ে আসছে। না হলে অনেক আগে থেকেই রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হতো।’ তিনি মনে করেন, আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীগুলোর অব্যাহত চাপ এড়িয়েই সরকারকে ভাসানচরে এক লাখ রোহিঙ্গা স্থানান্তরের সঠিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে এগিয়ে যেতে হবে।
মূলত দীর্ঘদিন ধরেই শিবিরে একটি রোহিঙ্গা সশস্ত্র গ্রুপের নির্যাতন সইতে সইতে অস্থিরতার মুখে পড়েছে রোহিঙ্গারা। নির্যাতনের শিকার সাধারণ রোহিঙ্গারা দেশে ফিরতে চাইলেও সশস্ত্র গ্রুপের সদস্যদের বাধার মুখে তারা ফিরে যেতে আগ্রহের কথাও কর্তৃপক্ষের সামনে প্রকাশ করতে পারে না। ফলে নিজ দেশেও সাধারণ রোহিঙ্গারা ফিরতে পারে না।
একদিকে শিবিরে সন্ত্রাসীদের অব্যাহত অত্যাচার-নির্যাতন অপরদিকে শিবিরের ঘিঞ্জি পরিবেশ রোহিঙ্গাদের জীবন বিষিয়ে তুলেছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে, মিয়ানমারের নিজ দেশে ফিরে যাবার বিষয়টি এখন রোহিঙ্গাদের কাছে এক অনিশ্চিত অবস্থায় গিয়ে ঠেকেছে। ফলে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের শিবিরে অবস্থানকারী রোহিঙ্গারা অনেকটাই যে যেদিকে পারে সেদিকেই যাবার চেষ্টা করছে।
এসব কারণেই দীর্ঘদিন পর হলেও রোহিঙ্গারা শিবির ছেড়ে ভাসানচরে গিয়ে হলেও নিরাপত্তা ও স্বস্তি খুঁজে পাবার চেষ্টা করছে।
যতদিন স্বদেশে ফিরে যাবার পরিবেশ তৈরি হয়নি ততদিন ভাসানচরের নিরাপদ স্থানে কাটাতে চায় তারা। সরকারের এমন উদ্যোগে তারা বেশ খুশি বলেও জানান।
জানা গেছে, সরকার অনেক আগে থেকেই ভাসানচরে এক লাখ রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের বিষয়টি বাস্তবায়নের চেষ্টা করে আসছিল।
সর্বশেষ গত ১৬ নভেম্বর রোহিঙ্গা সংশ্লিষ্ট ২২টি দেশীয় বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) প্রতিনিধিদেরও ভাসানচর পরিদর্শন করিয়ে আনা হয়।
সরকার ভাসানচরে বসবাসের জন্য একটা চমৎকার পরিবেশ তৈরি করে রেখেছে। সেখানে প্রচুরসংখ্যক দেশীয় বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করতেও আগ্রহী বলে জানান।
Leave a Reply