কক্সবাজারের নাজিরারটেক এলাকায় ফিশিং বোটের হিমাগার থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার হয় ১০ জেলের মরদেহ। এর মধ্যে তিনজনের বাড়িই চকরিয়ায়। পরিবারের সদস্যরা বলছেন, জেলেরা মাছ শিকারে সাগরে যাওয়ার তিন দিন পরই তারা মোবাইলে মেসেজ পেয়েছিলেন। তাতে লেখা ছিল— তাদের মৃত্যু হয়েছে, পরিবার যেন চেহলাম আয়োজন করে।
চকরিয়ার কোনাখালী ইউনিয়নের জঙ্গলকাটা এলাকায় গিয়ে নিহত তিন জেলের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। এ ঘটনায় তিন জেলের পরিবারই কেবল নয়, গোটা এলাকাতেই শোকের ছায়া ছড়িয়ে পড়েছে। পরিবারের সদস্যরা স্বজন হারিয়ে নিথর হয়ে গেছেন।
গত বোরবার বিকেলে কক্সবাজার পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে ফিশিং বোটের হিামাগার থেকে ১০ জেলের লাশ উদ্ধার করা হয়। চকরিয়ার নিহত তিন জেলে হলেন কোনাখালী ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড ছাদেরঘোনা বটতলী এলাকার কবির হোসেনের ছেলে সাইফুল ইসলাম (৩৫) এবং একই ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের জসিম উদ্দিনের ছেলে মো. তারেক মিয়া (২৩) ও শাহ আলমের ছেলে মো. শাহজাহান (৩৩)।
তিন জেলে পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ৭ এপ্রিল সাগরে মাছ ধরতে যান এই তিনজন। এর তিন দিন পরই তারা স্বজনদের মৃত্যুর সংবাদ পান মোবাইল ফোনে।
সাইফুল ইসলামের মা সালেহা বেগম বলেন, সাইফুল সাগরে যাওয়ার তিন দিন পর ওর বউয়ের মোবাইলে একটি কল আসে। কল করে বলে, ‘তোমার স্বামী মারা গেছে। তার চেহলাম দিয়ে দাও।’
তারেক ও শাহজাহানের পরিবারের সদস্যরাও জানান একই তথ্য। তাদের পরিবারকেও মোবাইলে মৃত্যু সংবাদ দেয়া হয়। সাইফুলের বড় ভাই ওমর হাকিম জানান, কোনোভাবেই ভাইয়ের সন্ধান না পেয়ে ১২ এপ্রিল চকরিয়া থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন তিনি।
রোববার ওই ট্রলার থেকে ১০ জেলের মরদেহ উদ্ধারের সময় সবারই হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ছিল। স্থানীয়দের ধারণা, ডাকাত সন্দেহে প্রথমে তাদের হত্যা করা হয়। এরপর মরদেহ ট্রলারের মাছ রাখার ফ্রিজ বা হিমাগারে রেখে পাটাতনে পেরেক মেরে দিয়ে বোটটি পানিতে ডুবিয়ে দেয়া হয়।
১৫ দিন পর ফিশিং বোটটি সোনাদিয়া দ্বীপের পশ্চিমে সাগরে ভাসতে দেখেন অন্য জেলেরা। কাছে গিয়ে পচা গন্ধ পেয়ে বোটটি টেনে নাজিরারটেক এলাকায় নিয়ে যান তারা। তাদের কাছ থেকে খবর পেয়ে থানা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা প্রশাসনের লোকজনের উপস্থিতিতে হিমাগারের পাটাতন ভেঙে মরদেহগুলো উদ্ধার করে।
কক্সবাজার পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম বলেন, মরদেহগুলো ময়নাতদেন্তর জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড হতে পারে। মরদেহগুলো শনাক্ত করে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। সম্ভাব্য সব দিক মাথায় রেখেই তদন্ত চলছে। প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপও নেয়া হচ্ছে।
Leave a Reply