পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা’র আদিবাসী স্বীকৃতি দাবি ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আইন ২০১০ সংশোধনপূর্বক জাতি বৈচিত্র্য সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান অধ্যাদেশ ২০২৫ (প্রস্তাবিত) প্রণয়নের বিতর্কিত সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রোববার (২৯ জুন) পিসিএনপি কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বান্দরবান জেলা কার্যালয় মুসাফির পার্কে এক সংবাদ সম্মেলন করেন।
সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে পিসিএনপি’র চেয়ারম্যান কাজী মুজিবুর রহমান বলেন,গত ৫ আগস্ট ২০২৪ এ ছাত্রজনতার গণ অভ্যুত্থানের পর নতুন বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছে। বৈষম্য বিরোধী নেতা নিয়ে গঠিত অন্তবর্তীকালীন এই সরকারের কাছে পার্বত্যবাসীর আশা ছিল পার্বত্য চট্টগ্রামে বিরাজমান সকল বৈষম্যমূলক আইন ও প্রবিধান বাতিল করে বৈষম্যের অবসান হবে।
কিন্তু বর্তমান সরকারের কতিপয় সদস্য, সংস্কার কমিশন ও এর মাধ্যমে একের পর এক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে। যার মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙালিদের আরো বৈষম্যের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে।
এসব সিদ্ধান্ত পার্বত্য চট্টগ্রামের অখণ্ডতার বিরুদ্ধে হুমকি তৈরি করেছে এবং সংবিধান ও রাষ্ট্র বিরোধী ষড়যন্ত্রকে উসকে দিচ্ছে।
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বিতর্কিত সিদ্ধান্তের বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলা হয়, গত ২৩ জুন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আইন ২০১০ সংশোধনপূর্বক নৃ-বৈচিত্র/জাতি বৈচিত্র্য সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান অধ্যাদেশ ২০২৫ (প্রস্তাবিত) প্রণয়ন সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
ওই সভায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরোয়ার ফারুকী বলেন- ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিউট পরিবর্তন করে জাতি বৈচিত্র্য ইন্সটিটিউট করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এ ছাড়াও উক্ত আইনের ৭(ঘ)’তে উল্লিখিত সরকার কর্তৃক মনোনীত শিল্প, সাহিত্য এবং সংস্কৃতির উন্নয়নে অবদান রাখিতে পারিবেন এমন উৎসাহী স্থানীয় ৬ জন প্রতিনিধি তন্মধ্যে কমপক্ষে ৪ জন স্থানীয় নৃ-গোষ্ঠী ভুক্ত হইবে” বলে যে ধারা রয়েছে তা পরিবর্তন করে ৬ জনই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীভুক্ত হবে বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
এর ফলে, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্ত সংবিধান পরিপন্থি এবং দুরভিসন্ধিমূলক। এর মাধ্যমে সংবিধানে উল্লিখিত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর পরিচয়কে আঁড়াল করা হচ্ছে বলে পিসিএনপি দাবি করেন।
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওই বৈঠকে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা উপস্থিত ছিলেন। গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদে জানা গেছে তিনি ওই বৈঠকে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জনগণকে আদবিাসী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার যুক্তি তুলে ধরে জানান “আমরা আদিবাসী শব্দটি চাচ্ছি শুধু আমাদের আইডেন্টিফিকেশনের জন্য।
“পার্বত্য উপদেষ্টার এ বক্তব্য ও সিদ্ধান্ত সংবিধানের ৬(২) অনুচ্ছেদের বিরোধী।
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠিীর পরিবর্তে নৃ-বৈচিত্র বা জাতি বৈচিত্র্য শব্দ চয়ন আদিবাসী পরিচয়ের সাংবিধানিক স্বীকৃতির জন্য কৌশলগত ভিত্তি তৈরি করতে পারে।
এ আইনের সংশোধনের মাধ্যমে নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিউট পরিচালনায় ৬ জনকে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায় থেকে নিয়োগ দেয়া হলে একচেটিয়া গোষ্ঠী প্রাধান্য পাবে এবং পার্বত্যাঞ্চলে বাঙালি সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণ ও প্রতিনিধিত্ব হ্রাস করবে।
এসব বিতর্কিত সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতে জাতিগত রাজনীতি উসকে দিতে পারে। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এহেন বিতর্কিত সিদ্ধান্তের জোর প্রতিবাদ জানিয়ে পিসিএনপি, আইন সংশোধন, সিদ্ধান্ত ও বাতিলে সরকার প্রধানের প্রতি জোর দাবি জানায়।
এই ধরনের বক্তব্য এবং আইন সংশোধনের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে একচেটিয়া গোষ্ঠী প্রাধান্য নিশ্চিত করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। এতে সাংস্কৃতিক ও প্রশাসনিক কাঠামোতে বৈচিত্র্য ও সমন্বয়ের বদলে বিভাজন ও অনিয়ম প্রতিষ্ঠিত হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর সুপ্রদীপ চাকমা মন্ত্রণালয়ের প্রায় ৯০ শতাংশ বরাদ্দ এমনভাবে বিতরণ করেছেন, যাতে একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায় ও রাজনৈতিক গোষ্ঠীর প্রাধান্য নিশ্চিত হয়েছে।
তিনি অতীতে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাষ্ট্রদূত ও পার্বত্য উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। এখন তিনি অন্তর্বর্তী সরকারে উপদেষ্টা পদে থেকে পুরোনো গোষ্ঠীগত পক্ষপাতের ধারাবাহিকতা বজায় রাখছেন, যা স্পষ্টত গণ-আন্দোলনের চেতনাবিরোধী।
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওই বৈঠকে উপস্থিত সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মোস্তফা সরোয়ার ফারুকী ও সুপ্রদীপ চাকমা সংবিধান সংরক্ষণের শপথ নিয়ে সরকারের দায়িত্ব নিলেও তারা দুজনে সংবিধান বিরোধী অবস্থান নিয়েছেন।
এ ধরনের বিতর্কিত সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী দুই উপদেষ্টা মোস্তফা সরোয়ার ফারুকী ও সুপ্রদীপ চাকমার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানিয়ে পিসিএনপি, পার্বত্য চট্টগ্রামে এহেন অসাংবিধানিক কর্মকাণ্ডের কারণে বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে জানান।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পিসিএনপি’র বান্দরবান জেলা কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, সহ-সভাপতি আলহাজ্ব নুরুল আলম, সহ-সভাপতি, এম রুহুল আমিন, সহ-সভাপতি হাজী আবদুস শুক্কুর, সহ-সভাপতি আবদুল আলীম মনু, কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক মোঃ শাহজালাল, জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল আবছার, ছাত্র পরিষদ সভাপতি মোঃ আসিফ ইকবাল, সাধারণ সম্পাদক হাবীব আল মাহমুদ প্রমুখ।
Leave a Reply