জনাব কাইজার আবুওয়ালা বাংলাদেশ সাপ্লাইয়ার্স নামীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক। তিনি প্রতিদিনের ন্যায় ইং ১৮/০৫/২০২১ইং তারিখ সন্ধ্যা অনুমান ০৭.০০ ঘটিকার সময় তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ৪র্থ তলার অফিসের দরজা তালাবন্ধ করে বাসায় চলিয়া যান। পরবর্তীতে ইং ১৯/০৫/২০২১ইং তারিখ সকাল অনুমান ১০.৩০ ঘটিকার সময় মোবাইল ফোনে জানতে পারেন তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তথা আমাফা সেন্টার বিল্ডিংয়ের ৩য় তলায় অবস্থিত মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, জুবলী রোড শাখার জানালার গ্রীল কেটে ভিতরে চোর ঢুকেছে।
তিনি সংবাদ পেয়ে ১৯/০৫/২০২১ইং তারিখ সকাল অনুমান ১১.০০ ঘটিকার সময় আমাফা সেন্টার নামক বিল্ডিংয়ের ৩য় তলায় অবস্থিত মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, জুবলী রোড শাখার ভিতরে প্রবেশ করে দেখেন যে, উক্ত ব্যাংকের দক্ষিণ পার্শ্বে জানালার লোহার গ্রীল কাটা। ব্যাংকের লোকজনদের জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানান যে, ব্যাংকের মধ্যে চোর ঢুকলেও কোন মালামাল বা টাকা পয়সা নিয়ে যায় নাই। তারপর তিনি কোতোয়ালী থানাধীন ২১৪ জুবলী রোডস্থ আমাফা সেন্টারের ৪র্থ তলার বাংলাদেশ সাপ্লাইয়ার্স অফিসের ভিতর প্রবেশ করে দেখতে পান যে, অফিসের ২টি জানালার গ্রীল কাটা এবং অফিস কক্ষের ভিতর রক্ষিত লোহার সিন্ধুক এবং আলমারির ড্রয়ার খোলা অবস্থায় পড়ে আছে। লোহার সিন্ধুকের ড্রয়ারের ভিতর রক্ষিত যাবতীয় মূল্যবান জিনিসপত্র সহ কাগজপত্র মেঝেতে ছড়ানো ছিটানো অবস্থায় এবং সিন্ধুকের ড্রয়ারে রক্ষিত ব্যবসায়ের প্রায় নগদ ২৭,৫০,০০০/- টাকা যথাস্থানে নাই। ১৮/০৫/২০২১ইং তারিখ সন্ধ্যা অনুমান ০৭.০০ ঘটিকা হইতে ১৯/০৫/২০২১ইং সকাল অনুমান ০৬.০০ ঘটিকার মধ্যবর্তী যেকোন সময় কোতোয়ালী থানাধীন ২১৪ জুবলী রোডস্থ আমাফা সেন্টার নামীয় বিল্ডিংয়ের ৪র্থ তলার বাংলাদেশ সাপ্লাইয়া অফিস কক্ষের ২টি জানালার গ্রীল কেটে সঙ্গোপনে অফিস গৃহে প্রবেশ করে অজ্ঞাতনামা চোর বা চোরেরা নগদ টাকা চুরি করে নিয়ে গিয়েছে। উক্ত ঘটনার বিষয়ে ভবনের মালিক জনাব কাইজার আবুওয়ালা ও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বাদী হয়ে এজাহার দায়ের করলে লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে ০২টি পৃথক মামলা রুজু হয়।উক্ত ঘটনার বিষয়ে মাননীয় পুলিশ কমিশনার মহোদয়ের নির্দেশে ডিসি (দক্ষিণ) জনাব বিজয় বসাক, বিপিএম, পিপিএম (বার) স্যারের দিক নির্দেশনায়, এডিসি (দক্ষিণ) জনাব মোঃ আমিনুল ইসলাম স্যারের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ও এসি (কোতোয়ালী জোন) জনাব মোঃ মুজাহিদুল ইসলাম স্যারের নেতৃত্বে অফিসার ইনচার্জ, কোতোয়ালী থানা জনাব মোহাম্মদ নেজাম উদ্দীন, পিপিএম (বার), পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) জনাব মোহাম্মদ কবির হোসেন, পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) জনাব মোঃ জাবেদ উল ইসলাম, এসআই/মোঃ মোমিনুল হাসান, এসআই/সুকান্ত চৌধুরী, এসআই/মোহাম্মদ আইয়ুব উদ্দিন, এসআই/মৃণাল কান্তি মজুমদার, এসআই/মোঃ রবিউল ইসলাম, এএসআই/অনুপ কুমার বিশ্বাস, এএসআই/সাইফুল আলম, কং/২৫৬১ রুবেল মজুমদার গণ অভিযান পরিচালনা করে উক্ত চুরির ঘটনায় জড়িত ২নং আসামী তথা সিএনজি ড্রাইভার মাহফুজ (৩০) কে ২১/০৫/২০২১ইং তারিখ ২৩.৩৫ ঘটিকার সময় কোতোয়ালী থানাধীন পুরাতন রেলষ্টেশনস্থ গাউছিয়া সাইকেল মার্টের বিপরীত পাশে গ্রামীণ মাঠের প্রবেশ মুখে রাস্তার উপর হতে গ্রেফতার করে এবং নগদ ৫,০০০/- টাকা ও ০২টি চাপাতি উদ্ধার পূর্বক জব্দ করে। ধৃত ২নং আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে সে ১নং আসামী মোঃ মনির হোসেন (৪০) উক্ত চুরির ঘটনা সংঘটন করেছে। এছাড়া চুরির কাজে বাঁধা দিলে তার সিএনজি থেকে উদ্ধার করা চাপাতি দিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে পালিয়ে যায় বলে জানায়। বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে ধৃত ২নং আসামীর দেওয়া তথ্য ও সনাক্ত মতে আকবরশাহ থানাধীন বিশ্বকলোনী কাচাবাজার টাংকি পাহাড় শান্তিনগর, জি-ব্লক খুকি বেগমের ঘরের ভিতর অভিযান পরিচালনা করে ১নং আসামী মোঃ মনির হোসেন ও ৩নং আসামী খুকি বেগম দ্বয়কে ২২/০৫/২০২১ইং তারিখ ভোর ০৩.২৫ ঘটিকার সময় আটক করা হয়। ধৃত ২নং আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে সে চুরির কথা স্বীকার করে এবং চোরাইকৃত টাকা ৩নং আসামী খুকু মনি প্রঃ খুকি বেগমের নিকট আছে। ধৃত ২নং আসামীর দেয়া তথ্য মতে ৩নং আসামীকে হেফাজতে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায় উক্ত চোরাইকৃত টাকা বসতঘরের ভিতরের রুমে সানসিটে রক্ষিত আছে। ধৃত ৩নং আসামীর দেখানো ও নিজ হাতে বের করে দেয়া মতে তার বসতঘরের সানসিটের উপর হতে একটি প্লাস্টিকের ব্যাগ ভর্তি চোরাইকৃত ২৭,০০,০০০/- টাকা ও চোরাইকাজে ব্যবহৃত ০১টি রেঞ্জ পেয়ে উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে জব্দতালিকা মূলে জব্দ করা হয়।
অপরাধ প্রক্রিয়াঃ
১নং আসামী মোঃ মনির হোসেন একজন পেশাদার চোর। সে অত্যন্ত সুচতুর। সে দীর্ঘ ৭ বছর ধরে চুরি পেশায় জড়িত। চুরি পেশার পাশাপাশি বিশ্বকলোনী শাপলা গ্যাস লাইন এলাকায় তার একটি ভাঙ্গারির দোকান আছে। তার চোরাইকৃত মালামালগুলো সে উক্ত দোকানে রেখে বিক্রয় করে। আন্তঃজেলা চোর আমির তার আপন বড় ভাই এবং সে গত ফেব্রুয়ারি মাসে মৃত্যুবরণ করেছে। ১নং আসামী প্রতিদিন রাত ১১.৩০ ঘটিকার পর চুরি করার উদ্দেশ্যে তার ব্যক্তিগত সিএনজি ড্রাইভার তথা ২নং আসামী মাহফুজের সিএনজি যোগে বের হয়। বের হওয়ার পর তারা বিভিন্ন অফিসের বিল্ডিং টার্গেট করে। যেখানে অন্ধকার পরিবেশ দেখে সে এলাকায় সিএনজি থামিয়ে ১নং আসামী সিএনজি থেকে নেমে অন্ধকার এলাকার বিভিন্ন অফিসের পিছনের রাস্তা দিয়ে পাইপ বেয়ে উপরে উঠে কৌশলে অফিসের জানালার গ্রীল কেটে ভিতরে প্রবেশ করে চুরি করে। চুরি করাকালীন ২নং আসামী মাহফুজ সিএনজি নিয়ে আশপাশের এলাকায় রাউন্ড দিয়ে পুলিশকে পাহারা দিতে থাকে। চুরি শেষে ১নং আসামী মনির হোসেন আবার সিএনজি ড্রাইভার তথা ২নং আসামী মাহফুজকে কল দিলে মাহফুজ সিএনজি নিয়ে যথাস্থানে চলে আসে। একপর্যায়ে ১নং আসামী মনির হোসেন চুরি শেষে তাড়াতাড়ি সিএনজিতে উঠে চলে যায়। চুরি শেষে সিএনজি যোগে বাসায় যাওয়ার পর ১নং আসামী মনির হোসেন ২নং আসামী মাহফুজকে প্রতিদিন চোরাই টাকা যা পায় তার ভাগ দিয়ে দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২৭,৫০,০০০/- টাকা চুরির ঘটনায় সিএনজি ড্রাইভার তথা ২নং আসামীকে নগদ ১০,০০০/- টাকা ভাগ দেয়। ২নং আসামী দিনের বেলায় ঘুমায় এবং রাত্রিবেলা সিএনজি চালায়। ১নং আসামী চুরি করার পর চোরাইকৃত জিনিসসমূহ তার স্ত্রী তথা ৩নং আসামী খুকুমনি প্রঃ খুকি বেগমকে বাসায় রাখতে দেয়। ৩নং আসামী চোরাই মালামাল জানা সত্ত্বেও উক্ত চোরাইকৃত মালামাল গোপন স্থানে লুকিয়ে রাখে। ১নং আসামী দীর্ঘ ৭ বছরে প্রায় ২০০-২৫০ চুরির অপরাধ সংঘটন করেছে। ২নং আসামী সিএনজি যোগে তাকে বিভিন্ন অফিসের সামনে নামিয়ে দিত।
১নং আসামী মোঃ মনির হোসেন ইতিপূর্বেও কোতোয়ালী থানাধীন নজির আহমেদ রোডের লায়লা মঞ্জিলের ৩য় তলার একটি বেসরকারি অফিসে ৭/৮ মাস আগে ২০,০০০/- টাকা চুরি করে। ৬ মাস পূর্বে জামালখান রোডস্থ সানমার স্প্রীং গার্ডেন নামক একটি বিল্ডিংয়ের ৩য় তলায় ২০৩নং রুমে, চেরাগী পাহাড় মোড়ের ব্র্যাক অফিসে, ডাঃ খাস্তগীর স্কুলের পাশে একটি কম্পিউটার একাডেমীতে ল্যাপটপ চুরি করার চেষ্টা করে । ১ বছর পূর্বে রাজাপুকুর লেইন এলাকার কাগজের ০৩টি গোডাউন হতে প্রায় ৫০,০০০/- টাকার বিভিন্ন সিলভার জাতীয় মালামাল, তার চুরি করে। ৮/৯ মাস পূর্বে চকবাজার গুলজার মোড়ের ক্যাপেচিনো নামক রেষ্টুরেন্টের জানালার গ্রীল কেটে রেষ্টুরেন্ট এর ক্যাশ বাক্স থেকে নগদ ৩৬,০০০/- টাকা, ০১টি এলইডি মনিটর, ১২টি ১ কেজি ওজনের দুধের প্যাকেট, ১৩টি ৫০০ গ্রাম ওজনের ঘি এর প্যাকেট চুরি করে। রমজান মাসের পূর্বে চৌমুহনী ১৬৯৩/শেখ মুজিব রোডস্থ মাহমুদা এন্টারপ্রাইজ এর উপরে ৪র্থ তলায় একটি অফিস হতে নগদ ৫০,০০০/- টাকা, ০১টি ল্যাপটপ এবং চৌমুহনী শেখ মুজিব রোডস্থ আগ্রাবাদ সেন্টার এর বিকাশ অফিসের উপরে ৩য় তলার একটি অফিস হতে ০২টি ল্যাপটপ চুরি করে। আসামীগণ চট্টগ্রাম মহানগরের বিভিন্ন এলাকায় অফিস ও স্কুল কলেজে নগদ টাকা এবং মূল্যবান জিনিস চুরি করে। গ্রীল কেটে প্রবেশের পর কোন অফিস বা স্কুলে সিসিটিভি ক্যামেরা থাকলে ডিভিআর মেশিনটি খুলে বালতির পানিতে চুবিয়ে রাখে যাতে তাকে কেউ চিনতে না পারে। সিসিটিভি ক্যামেরা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য তারা সকল প্রকারের কৌশল অবলম্বন করে।
উল্লেখ্য যে, ধৃত ১নং আসামী ইতিপূর্বেও আকবরশাহ থানার ০১টি চুরি মামলায় এবং খুলশী থানায় ০১টি চুরি মামলায় গ্রেফতার হয়ে ২ বছর হাজতবাস করেছে। ধৃত ১ ও ২নং আসামীদ্বয় চুরির ঘটনায় ধরা পড়লে উক্ত ঘটনা থেকে পালানোর জন্য সিএনজি থেকে উদ্ধারকৃত ০২টি চাপাতি দিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। এসআই/মৃণাল কান্তি মজুমদার বাদী হয়ে আসামীদ্বয়ের বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করলে অস্ত্র আইনে পৃথক ০১টি মামলা রুজু হয়।
উদ্ধারকৃত আলামতের বর্ণনা- ২৭,০৫,০০০/- টাকা, ০২টি চাপাতি, ০১টি রেঞ্জ ও ঘটনায় ব্যবহৃত সিএনজি এবং তাহার পরিহিত লুঙ্গি, শার্ট ও রুমাল।
আসামীদের নাম ঠিকানা-
১) মোঃ মনির হোসেন (৪০), পিতা-মৃত মোহাম্মদ হোসেন, মাতা-আকলিমা বেগম, স্ত্রী-খুকি বেগম, সাং-বজুরীখোলা, বড় বাড়ি, থানা-কচুয়া, জেলা-চাঁদপুর বর্তমানে-বিশ্বকলোনী, কাঁচা বাজার, টাংকি পাহাড়, শান্তিনগর, জি-ব্লক, খুকি বেগমের ঘর, থানা-আকবরশাহ, জেলা-চট্টগ্রাম।
২) মোঃ মাহফুজ (৩০), পিতা-মোঃ আজিজ, মাতা-লিলমতি, সাং-চাঁনপাড়া, ৩নং ওয়ার্ড, আনাজি বাড়ি, থানা-কচুয়া, জেলা-চাঁদপুর বর্তমানে-লালখান বাজার, তুলা পুকুরপাড়, আমিন সেন্টারের পিছনে, ইউসুফের বাড়ি, ৩য় তলা, ব্যাচেলর বাসা, থানা-খুলশী, জেলা-চট্টগ্রাম।
৩) খুকু মনি প্রঃ খুকি বেগম (২৮), স্বামী-মোঃ মনির হোসেন, পিতা-মৃত আব্দুস সামাদ, মাতা-মর্জিনা বেগম, সাং-বজুরঘোলা, বড় বাড়ি, থানা-কচুয়া, জেলা-চাঁদপুর বর্তমানে-বিশ্বকলোনী, কাঁচা বাজার, টাংকি পাহাড়, শান্তিনগর, জি-ব্লক, খুকি বেগমের ঘর, থানা-আকবরশাহ, জেলা-চট্টগ্রাম।
মোহাম্মদ নেজাম উদ্দীন, পিপিএম, অফিসার ইনচার্জ, কোতোয়ালী থানা, সিএমপি, চট্টগ্রাম।তাং-২২/০৫/২০২১ইং।
Leave a Reply