চলমান মহামারী করোনায় লকডাউনকে উপেক্ষা করে কুমিল্লা দক্ষিনাঞ্চলের সবক’টি উপজেলা জুড়ে স্থানীয় প্রশাসনের নাকের ডগায় কতিপয় ব্যাক্তি অপরিকল্পিত ভাবে ড্রেজার-ভেগু দিয়ে মাটি কাটা-বালু উত্তোলন করে বিক্রি কিংবা পুকুর, ডোবা ও ফসলী জমি ভরাট এবং গর্ত করে এবং বাতাসে বালু আর বালু এলাকার পরিবেশের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে এ অঞ্চলের কয়েক লাখ মানুষের। তবে ট্রাক্টর দিয়ে মাটি পারাপারের কারনে কাঁচা-পাকা সড়কগুলোর বর্তমানে বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে।
লাকসাম, নাঙ্গলকোট ও বরুড়া পৌরএলাকাসহ উপজেলাগুলোর স্থানীয় প্রশাসন ও কতিপয় রাজনৈতিক নেতা এ অবৈধ ব্যবসার মদদ জুগিয়ে যাচ্ছে। স্থাণীয় একাধিক সূত্র জানায়, জেলা দক্ষিনাঞ্চলের সবকটি উপজেলায় অবৈধ ভাবে মাটি কাটা-বালু উত্তোলনের ফলে এলাকার জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় একটি চক্র জেলা-উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যাক্তিবর্গকে ম্যানেজ করেই তারা এসব কাজ করছে। ওই চক্র রাতের অন্ধকারে সরকারি কোন নীতিমালা তোয়াক্কা না করেই ড্রেইজার , ভেগুসহ নানাহ যান্ত্রিক পরিবহন ব্যবহার করে যত্রতত্র মাটি কাটা- বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে। আর বালু কিংবা মাটি পারাপারে অবৈধ ট্রাক্টর, পিকআপ, ভ্যান, কার্গো ও লরি ব্যবহার করার ফলে এ অঞ্চলের সকল সড়কগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়েছে। এলাকার বিভিন্ন সেন্টিকেট একাধিক ভাগে ভাগ হয়ে তাদের এ অবৈধ ব্যবসা চালাচ্ছে। ফলে এলাকার সড়ক, ঘরবাড়ি, দোকানপাট ও ফসলি জমিগুলো তাদের অতীত ঐতিহ্য হারিয়ে মারাত্মক পরিবেশ ঝুঁকিতে পড়েছে।
ওই চক্রের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ স্থানীয় প্রশাসনে দিলেও এ ব্যাপারে তাদের দায়িত্ব ও ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এ অঞ্চলের জনমনে। অথচ তাদের দায়িত্বহীনতায় সরকারের কোটি কোটি টাকার কাঁচা-পাকা সড়ক আজ অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। সূত্রগুলো আরও জানায়, প্রযুক্তির যুগে একাধিক যান্ত্রিক পরিবহন দিয়ে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন ও মাটি বিক্রির অসুস্থ্য প্রতিযোগিতা চলছে এ অঞ্চলে। বেশির ভাগ আবাদী জমি প্রায় ১৫/২০ ফুট পর্যন্ত খনন করে মাটি ও বালু বিক্রি করে বিভিন্ন এলাকায় ভরাট কাজে ব্যবহার করে হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতিনিয়ত কয়েক লাখ টাকা। এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন, রাজস্ব বিভাগ ও পরিবেশ দপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনাকারী সংস্থার কর্মকর্তারা রহস্যজনক কারনে নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। এ ভাবে এই অবৈধ ব্যবসা চলতে থাকলে ফসলি জমির মাটি কাটা ও বালু উত্তোলনে এ অঞ্চলের সার্বিক পরিবেশ বিপর্যয় ঘটবে। এছাড়া সরকারের কোটি কোটি টাকা খরচ করে কাঁচা-পাকা সড়ক নির্মাণ করলেও অবৈধ ট্রাক্টরের দৌরাত্বে আজ ভেস্তে যেতে বসেছে।
এ পর্যন্ত স্থানীয় প্রশাসন অদ্যবধি কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় ওই চক্রের অবৈধ ব্যবসাটি মহামারী করোনায় লকডাউনের মধ্যেও দিন দিন তাদের দৌরাত্ম বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে মহামারী করোনা ভাইরাসও তাদের দমাতে পারেনি। জেলা দক্ষিনাঞ্চলের পরিবেশবিদদের একাধিক সূত্র জানায়, এলাকার ভূমি দস্যু কিংবা বালু উত্তোলন ও মাটি বিক্রি ঘিরে ওইসব সেন্টিকেট সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিলেও কোন প্রতিকার তো হয়নি বরং উল্টো তাদের হাতে লাঞ্চিত হতে হয় এলাকাবাসী। ওইচক্র দম্ভোক্তি দিয়ে বলে বেড়ায় তারা নাকি সকল মহলকে ম্যানেজ করেই তাদের এ ব্যবসা পরিচালনা করছেন এবং শত শত অভিযোগ কিংবা সাংবাদিক এনে হাজারো লেখালেখি করলে আমাদের কিছুই হবে না তবে অনেক ক্ষেত্রে অভিযোগকারীরাই নানাহ ঝামেলায় পড়ে যাবে। কি দৌরাত্ব তাদের যা বলার অপেক্ষা রাখে না। সকল মহলই যেনো নীরব দর্শক।
জনৈক ক্ষতিগ্রস্থ পাশ^বর্তী জমির মালিক জানায়, স্থানীয় প্রশাসন ও ওই বালু সেন্ডিকেট আজ বউ শাশুড়ীর মতো। সবকিছু জেনেও কমিশন বানিজ্যের কারণে তা বন্ধ হচ্ছে না। আমরা ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা কার কাছে বিচার দিবো। সবাই যেন এ ব্যবসার সাথে জড়িত। অথচ তাদের এ অবৈধ ড্রেজার ও ভেগু-ট্রাক্টর বানিজ্যে সরকারের সড়ক ছাড়াও এলাকার বাড়িঘর ও ফসলি জমি ভাঙ্গানের মুখে পড়েছে। এ ব্যাপারে জেলা-উপজেলা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
Leave a Reply